স্বপ্ন জলের গান ( ছোট গল্প)

খোলা আকাশে নক্ষত্ররাজি দেখিতে দেখিতে পুত্র পিতাকে শুধায় বাবা কহো দেখি সৌরজগতের সবথেকে বড় নক্ষত্রের নাম কি? পিতা কিয়দক্ষন ভাবিয়া কহেন জানিনে। পুত্র হাসিয়া কহে ‘মিউ সাকাই’। পিতা অবাক হইয়া পুত্রের হস্ত নিজ হস্ত মাঝে ঢুকাইয়া কিঞ্চিৎ চাপ দিয়া বলেন, তুমি বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক কিছু জানিয়া গিয়াছো। বড় হইলে তুমি বড় বিজ্ঞানী হইবে। কাজ করিবে নাসাতে (ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)।

পুত্র কহে বাবা চল গুগলে নাসার অফিস দেখি। দেখিতে দেখিতে রাত্রি বাড়ে। পিতা-পুত্র রেল কলোনির বস্তিতে তাহাদের গৃহে ফিরিয়া আসে। পুত্র কহে বাবা এই ঘরখানি বড় শীর্ণ। বাবা কহেন, কোভিড চলিয়া গেলেই আয় বাড়িবে তখন আমরা ধানমণ্ডিতে বড় দেখিয়া ফ্লাট ক্রয় করিবো। কত বড় বাবা, পু্ত্র শুধায়। ১৮০০ বর্গফুট -পিতা কহেন। কত দাম বাবা? এক কোটি বিশ লাখ টাকা হইতে পারে।

এইরূপ স্বপ্নালোচনায় রাত্রি গড়াইয়া প্রথম প্রহরের অন্তিমে উপনিত হইবার উপক্রম হইলে পিতা-পু্ত্র নৈশভোজ সমাপ্ত করে গৃহের শেষ চাউলের গরম ভাতের সহিত শেষ একখানা ডিম ভাজি দ্বারা।
পিতার দেওয়া সুন্দর স্বপ্ন হৃদয়ে গাথিয়া ছোট্ট বালক নিদ্রা দেবীর কোলে মাথা রাখে। তাহার অতি নিকটে মাথা রাখিয়াও পিতা জগলুল আমিন নিদ্রা দেবি তো দুরের কথা তন্দ্রা দেবির সান্নিধ্য লাভ করিতেও ব্যার্থ হন। প্রতি রাত্রির মতো রিভিউ হইতে থাকে করোনার তিন বছরের ঘটনাবলী। করোনার আগমন। তাহার প্রাইভেট কলেজের চাকুরী চলিয়া যাওয়া, প্রাইভেট ছাত্র-ছাত্রীদের বকেয়া বৃদ্ধি অতঃপর ছাত্র-ছাত্রীদের নাই হইয়া যাওয়া। সঞ্চয় ফুরাইয়া যাইবার পর ফ্লাট বাসা ছাড়িয়া দেওয়া। স্ত্রী জলির পরমানবে প্রীতি।

একদিন শিল্পপতি প্রেমিক পুরুষের হাত ধরিয়া প্রস্থান কালে জলি কহিয়াছিল, পুত্রের উত্তম ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণ তোমাদ্বরা অসম্ভব, আমি উহাকে সঙ্গে লইয়া যাইতেছি। জগলুল আমিন ইহা শুনিয়া মস্তক নিচু করিয়া অশ্রু বিসর্জন করিয়াছিলেন মাত্র, প্রতিউত্তর করিতে পারেন নাই। কিন্তু নয় বৎসরের ছোট বালক পিতা-মাতার কথা আড়াল হইতে শুনিতে পাইয়াছিল। মাতার জোরাজুরি আর চাপ প্রয়োগেও সে কিছুতে মাতার সহিত যাইতে স্বীকৃত হয় নাই। অতঃপর জলি অশ্রুজলে বুক ভাষাইয়া পুত্রকে আদর করিয়া বিদায় লইয়াছিলেন।

জগলুল আমিনের অবস্থা দিনদিন খারাপ হইয়াছে। ভাড়া বকেয়া হওয়ায় বাড়ীওয়ালা আসবাবপত্র সব রাখিয়া তাড়াইয়া দিয়াছিল। আত্মিয়- বন্ধু তাহার তেমন কেহ নাই। ঋণের বোঝাও কম ভারী নহে।

আহার যোগাড় করা আজকাল দায় হইয়া দাঁড়াইছে। তবু নিয়োম করিয়া পুত্রকে প্রত্যহ স্বপ্নের জলে স্নান করাইতে ভোলেন না। নিজেও সেই জলের ঝাপটা বদনে লাগাইতে লাগাইতে ভাবেন কাল সকালে কেহ ফোন করিয়া কহিবে, স্লামালাইকুম স্যার। আপনি কী কষ্ট করিয়া আমার পুত্রকে পড়াইবার দায়িত্ব লইতে পারিবেন?

Related Posts

12 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.