সামাজিক দক্ষতা ও আন্তঃব্যক্তির সম্পর্ক

মানুষ সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি বিভিন্ন মাত্রায় সম্পর্ক অনুভব করে থাকে। ফলে ব্যক্তির মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ হয়। এভাবে কোনো ব্যক্তির প্রতি আর এক ব্যক্তির সম্পর্ক সৃষ্টি হতে পারে। আর এ সম্পর্কের কারণে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে প্রেম, প্রীতী ও ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধতে পারেন। ফলে দেখা দেয় আন্তঃব্যক্তির সম্পর্ক। অর্থাৎ আন্তঃব্যক্তির সম্পর্ক হলো ব্যক্তিকে ব্যক্তিকে মেলামেশা, ভাববিনিময় বা সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে এক ধরনের আপেক্ষিক আকাঙ্ক্ষা। দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বন্ধুত্ব, দলগঠন ইত্যাদিতে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের প্রভাব লক্ষ করা যায়। সাধারণভাবে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বলতে অপর ব্যক্তির প্রতি এক ধরনের ইতিবাচক মনোভাবকে বুঝায়, যেখানে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির প্রতি প্রশংসা ও সহযোগিতা মূলক মনোভাব বা আচরণ প্রকাশ করে থাকে। মানুষ কখনো একা বাঁচতে সক্ষম হয় না। জীবনের প্রতিক্ষেত্রে তাকে আত্মীয়, বন্ধু, সহকর্মী, শিক্ষক, পরামর্শক প্রভৃতি নানান ব্যক্তির সাথে তার মিথস্ক্রিয়ার প্রয়োজন হয় এবং সামাজিক কাঠামো ও অনুশাসনের ভিত্তিতে তার সম্পর্ক বিনির্মাণের প্রয়োজন হয়। সমাজ তার কাঠামো অনুসারে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের দায়বদ্ধতা, মাত্রা প্রভৃতি নির্ধারণ করে দেয়। ব্যক্তি এই কাঠামোকে অনুশাসন হিসেবে মেনে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়াস পায়। আন্তঃসম্পর্ক নির্মাণে ব্যক্তির প্রধান বিবেচ্য বিষয় দুইটি হচ্ছে বয়স এবং অভিজ্ঞতা। ব্যক্তির বয়স তার আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের কর্তব্য নির্ধারণ করে অন্যদিকে অভিজ্ঞতা আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজের ক্ষেত্রে সম্পর্কের মান নির্ধারন করে। ব্যক্তি জন্ম ঘটে সামাজিক প্রতিষ্ঠান তথা পরিবারে তাই পিতা – মাতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বিনির্মানের কোনো প্রশ্ন আসে না। এটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে তার সাথে অঙ্গীভূত হয়। মূলত আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক নির্মানে দক্ষতার পরিচয় দিতে হয় পরিবারের বাইরের জনের সাথে সম্পর্ক নির্মানে। মানুষ সামাজিক কাঠামো অনুসরণ করে যে ধরনের আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক তৈরি করুক না কেন সকল সম্পর্ক নির্মানের জন্য তার কিছু স্বাভাবিক দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে। এই দক্ষতা তৈরির জন্য ব্যক্তির যে সব আচরণিক বৈশিষ্ট্য গড়ে তোলার প্রয়োজন পরে সেগুলো হলো :

সম্মান প্রদর্শন : যে কোনো মানুষের কাছে তার সম্মান সর্বদা অধিক। সম্পর্ক বিনির্মানের জন্য ব্যক্তিকে তাই অপরকে সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব তৈরি করতে হবে। অপরকে বোঝার সক্ষমতা : যে কোনো সম্পর্ক তৈরির জন্য অপর জনের অনুভূতিকে বোঝার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক নির্মানে পরস্পরের বোঝা পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সহযোগিতা ও সহমর্মিতা মনোভাব : আন্তঃব্যক্তি সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য সম্পর্কের প্রতি সহমর্মি থাকতে হবে উভয় পক্ষকে। একই সাথে ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা গড়ে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে।

নিজেকে প্রকাশ করার সক্ষমতা : ব্যক্তি আত্মকেন্দ্রীক হয়ে পড়লে তার পক্ষে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক নির্মাণ কঠিন হয়ে পড়ে। আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পরস্পরকে পরস্পরের কাছে প্রয়োজন অনুসারে নিজেকে প্রকাশ করার সক্ষমতা থাকতে হবে।

স্বার্থপরতা পরিহার করা : আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক নির্মানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাত এড়িয়ে চলা। অতিমাত্রায় স্বার্থপর ব্যক্তির পক্ষে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক নির্মান এবং তা সুরক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

ব্যক্তিগত অহংকার নিয়ন্ত্রণে রাখা : অতিরিক্ত ব্যক্তিগত অহমিকা আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক নির্মাণে বাঁধা হয়ে দাড়ায়। তাই আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক তৈরি ও সুরক্ষায় আত্ম অহংকারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

Related Posts

6 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.