বৃষ্টির পানিতে ভেজা প্রেম

আজকে সকাল থেকেই মুষুল ধারে বৃষ্টি ঝরছে।আষাড় শ্রাবণ মাস তা প্রকৃতি জানান দিচ্ছে পুরো শক্তি নিয়ে।বৃষ্টি প্রকৃতির কাছে প্রেমের মতো।খাঁ খাঁ গ্রীষ্মের খরতাপের পর প্রকৃতি যেন এই প্রেমের ছোঁয়া পেতে মুখিয়ে থাকে।সব ঋতু ই সুন্দর।কিন্তু বর্ষার মধ‍্যে যেন কি একটা আছে যা অন‍্য ঋতুর মধ‍্যে নেই।অন‍্যদের কাছে যাই মনে হোক না কেন,বৃষ্টির কাছে এমনটাই মনে হয়।হয়তো বৃষ্টির নামে তার নাম এজন‍্য বোধহয়।

জিতুর আসার কথা ছিল আজ সকালে।কিন্তু ছেলেটা যেন কেমন।সব ভুলে বসে থাকে।শুধু যে ভুলে যায় তাই ই না,পরে এটা নিয়ে কথা বললে বলে,সত‍্যি আসার কথা ছিল নাকি আজ?কেমন যে ভুলোমনা সে।মাঝে মাঝে বৃষ্টির মনে হয়,জিতু অদ্ভুত একটা মানুষ।কিন্তু এমন অদ্ভুত মানুষকেই বৃষ্টির ভালো লাগে।বৃষ্টি ভাবছিল,জিতুর জন‍্য অপেক্ষা না করে নিজেই জিতুর সাথে দেখা করতে যাবে নাকি।মাঝখান থেকে বৃষ্টিতে একটু ভিজে নেওয়াও যাবে।অনেকদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয় না।মা দেয় না,বলে,”এখনকার বৃষ্টিতে অনেক বজ্রপাত হয়,বের হওয়া ঠিক না”।আজকে সেই ছোটবেলার মতো একটু ভিজে নেওয়া যাবে জিতুর সাথে দেখা করার অছিলায়।

একটা ছাতা নিয়ে বের হয়ে গেল বৃষ্টি।যদিও মাঝপথে ছাতাটা বন্ধ করে ফেলবে,এই পরিকল্পনা ই রয়েছে তার।ফোন দিয়ে গেলে ভালো হত কিনা ভাবছে বৃষ্টি।না থাক।একবারে গিয়ে চমকে দেয়া যাবে।কিছুক্ষণ গিয়ে ছাতা বন্ধ করে ফেলল বৃষ্টি।রাস্তায় কোনো মেয়ে নেই বললেই চলে।সব ছেলেদের দল।কেউ সাইকেলে,কেউ হেঁটে।কিন্তু সবাই ই পরে আছে রেইনকোট,না হয় নিয়ে আছে ছাতা।ছাতা বন্ধ করে ফেলায় ঠান্ডা বৃষ্টির ছাট গায়ে এসে লাগছে।আর সবাই কেমন অদ্ভুত চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে।বৃষ্টির মজাই লাগছে।বৃষ্টির সাথে বৃষ্টি মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

পনের মিনিট পর বৃষ্টি পৌঁছে গেল নির্দিষ্ট গন্তব‍্যে।ভিজে একেবারে জবজবে হয়ে গেছে সে।কিন্তু দরজার দিকে তাকিয়ে থ মেরে গেল সে।তালা মারা বাহির থেকে।তারমানে জিতু কোথাও গেছে।এখন ফোন দিতেই হবে জিতুকে।সত‍্যিই ছেলেটার কপাল মন্দ।সারপ্রাইজ ও দেয়া যায় না ছেলেটাকে।ভাবতে ভাবতে তার নিজের ফোনটা বের করার আগেই,রিংটন বেজে উঠলো সেটাতে।ফোনটা বের করতেই দেখে জিতুর কল।

-হ‍্যালো!!বৃষ্টি!!তুমি কোথায়?আমি তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

-কি বলো!!তোমার আসার কথা মনে আছে?

-থাকবে না কেন?তুমি কোথায় সেটা বল আগে?

-আমি তোমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে।তোমায় অবাক করে দিতে চেয়েছিলাম।

-কি বলো??আচ্ছা ওখানেই দাঁড়াও!আমি পনের মিনিটের মধ‍্যে আসছি।

অবাক অবাক গলায় জিতু বললো।

বৃষ্টির এখন কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেছে বৃষ্টিতে ভিজে।

ওই তো দূরে একটা সাইকেল চালিয়ে ঝাকড়া চুল দুলিয়ে জিতু আসছে।মাঝে মাঝে এই চুল নিয়ে বৃষ্টি ভাঙাতো জিতুকে।বলতো তোমার চুল নজরুলের মতো।এই বলে খুব হাসতো সে।জিতুও হাসতো।

– ছাতা থাকা সত্বেও ভিজে তো জবজবে হয়ে আছো??কি ব‍্যাপার?এসেই বললো জিতু।

-ইচ্ছা করে।তা তোমাকে কে মনে রাখালো যে আজকে দেখা করার কথা?তোমার তো মনে থাকে না।

-মনে আছে।(বলেই মুচকি হাসি দিল সে।হাসিটা বৃষ্টির অনেক পছন্দের।)

একটু দাঁড়াও।বলেই সাইকেলের পেছন থেকে একটাবড় প‍্যাকেট নিয়ে আসলো সে।এতক্ষণ খেয়াল করেনি বৃষ্টি সেটা ওখানে ছিল।

-শুভ জন্মদিন বৃষ্টি।বৃষ্টিতে যেমন সব কিছু মুছে যায়,তেমনি তোমার পরশে আমার সব দুঃখ মুছে যাক।

বৃষ্টি তাকিয়ে আছে।চোখ দিয়ে একফোঁটা দুফোঁটা জল গড়াচ্ছে।ভাগ‍্যিস বৃষ্টিতে ভিজেছিল তাই বোঝা যাচ্ছে না।

-কে বলেছিল এত কিছু কিনতে?এত কিছু না কিনে শুধু কিছু ফুল দিলেই তো হত।

-বাহ রে!তাই কি হয়!পুরো প্রকৃতি পর্যন্ত তোমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে!আর আমি বসে থাকবো?শোন এমনকরে দাঁড়িয়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।যাও ফিরে যাও।রিকশা নেবে,না আমি পৌঁছে দেব?

-রিকশাও নেব না।তোমাকেও পৌঁছে দিতে হবে না।চলো আমরা দুজন হাঁটবো।অনেকদূর যাব আজ।সাইকেল রেখে আসো ভেতরে।

-আচ্ছা তোমার যা ইচ্ছা আমারও তাই।

এইবলে দুজন হাঁটতে হাঁটতে মিলিয়ে গেল।দূর থেকে দেখলে অনেকের ই হিংসে হত,এই সুখি একজোড়া পায়রাকে দেখে!!!!

Related Posts

7 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.