বাংলার শীতকালের গ্রামীণ ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড়

বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ বলে খ্যাত খেজুর গাছ, আজ অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। শীতকালে খেজুর রস দিয়ে তৈরি পাটালি গুড়, পিঠা-পায়েস ইত্যাদি নিয়ে গ্রাম বাসীদের মনে ছিল আনন্দের ঘনঘটা। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে খেজুরের রস উৎপাদন কমে গেছে, প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও শীত পড়ার শুরুতে খেজুর গাছিরা চরম সংকট মোকাবেলা করছে। তারপরেও কিছু কিছু এলাকায় শখের বশত গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। খেজুর রসের উৎপাদন বাড়াতে হলে টিকিয়ে রাখতে হবে খেজুর গাছের অস্তিত্ব।

শীতকালের হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যে কাঁচা খেজুরের রস খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। কেউ আবার এই রস প্রক্রিয়াজাত করে পিঠা-পায়েস গুড় তৈরি করে খেয়ে থাকেন। সারা বছর খেজুরের রস সংগ্রহ করা যায়। শীত যত বাড়তে থাকে খেজুর রসের মিষ্টতাও ততোই বাড়তে থাকে। শীতের সাথে রয়েছে খেজুর রসের এক অপূর্ব বন্ধন। গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হত পিঠা-পায়েস পাটালী গুড় তৈরীর ধুম। গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা ঝোলা গুড়, দানা গুড়, নলের গুড় ও বাটালী গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই ভরে যায় মন।

খেজুরের রসে প্রচুর এনার্জীর রয়েছে। খেজুরের রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  এরই অংশবিশেষ এটাকে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক বলা যেতে পারে। খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যায় আবার তৈরি করেও খাওয়া যায়। খেজুরের রসে আয়রন বেশি থাকে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। যাদের শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে তারা খেজুরের রস খেতে পারবেন এতে ক্লান্তি দূর হবে। সারারাত ধরে রস জমে থাকার পর সকাল সকালেই রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে সময় যত গড়াতে থাকে এতে ফারমেন্টেশন বা গাজন প্রক্রিয়া হতে থাকে, এতে রসের স্বাদ নষ্ট হয়। দিনের আলোতে গাজন বেশি হয়,তাই দিনের বেলা রস খাওয়া ঠিক নয়। এতে পেটের নানা সমস্যা হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, খেজুরের রসে কোন পোকামাকড়, বাদুড় মুখ যেন না দেয়। ফলে নিপা ভাইরাস এর সংক্রমণ হতে পারে।

খেজুরের রস খাওয়ার সময় অবশ্যই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।

যারা খেজুরের রস খাবে না
যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা খেজুরের রস খাবে না কারণ চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।

কতটুকু রস খাবেন
একজন সুস্থ মানুষ সকালে এক থেকে দুই গ্লাস রস খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে খেলে সমস্যা নেই। শরীরের শক্তি যোগাতে পরিমাণমতো রস খাওয়া ভালো।

কীভাবে খাবেন
রাতে বা সকালে রস খেতে পারেন। খেজুরের রস দিয়ে সুস্বাদু গুড় তৈরি করে সেই গুড় দিয়ে বিভিন্ন খাবার কিংবা পুলি পিঠা তৈরি করেও খেতে পারেন।

আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে, যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই লাইক কমেন্ট শেয়ার করে আমার পাশে থাকবেন।

Related Posts

32 Comments

    1. এটাই বাংলার ঐতিহ্য। স্বাদ গন্ধ একাকার ভালোলাগা ভালোবাসা …..আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.