বংশগতি কি?? কে বংশগতিবিদ্যার জনক??

আমাদের চারপাশে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান অনেক জীব রয়েছে। জীববিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ২,৭০,০০০ ভাস্কুলার উদ্ভিদ ও ১৫ লক্ষেরও বেশি প্রাণী প্রজাতি শনাক্ত করেছেন। এক প্রজাতির জীব অন্য প্রজাতির জীব হতে ভিন্নতর।আবার একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি সদস্য কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে অন্য সদস্য হতে পৃথক।এই সুবিশাল জীবকুলে প্রজাতিগত বৈচিত্র্য ও অন্তঃপ্রজাতিক বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি জীবই বংশবিস্তারের মাধ্যমে তাদের বংশধারা অক্ষুণ্ণ রাখে।অর্থাৎ প্রতিটি জীবই নিজের অনুরূপ আকৃতিবিশিষ্ট ও গুণসম্পন্ন অপত্য জীবের জন্ম দেয়।তাই কুকুরের শাবক কুকুর হয় এবং বিড়ালের শাবক বিড়াল হয়।আবার কাঁঠালের বীজ হতে কাঁঠাল চারা জন্মায়,আমের বীজ হতে আম চারা জন্মায়।

পিতামাতা ও পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্য এবং গুণাবলী বংশপরম্পরায় সন্তান সন্ততির মধ্যে সঞ্চারিত হয়।যে প্রক্রিয়ায় পিতামাতার আকার-আকৃতি,চেহারা,দেহের গঠন-প্রকৃতি,শারীরবৃত্ত, আচরণ ইত্যাদি নানাবিধ বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমিকভাবে তাদের সন্তান সন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয় তাকে বংশগতি বলে।পিতামাতার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সন্তান সন্ততিতে সঞ্চারিত হয় বংশগতিবস্তুর মাধ্যমে।এগুলো হলোঃ ক্রোমোজোম, জিন, ডিএনএ, আরএনএ। বংশগতিবস্তুগুলো জীবকোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত উপাদান যেগুলোর মাধ্যমে প্রত্যেক জীবের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যসমুহ তাদের সন্তান সন্ততিতে অবিকল স্থানান্তর ও পরিস্ফুটিত হয়।

বংশগতি সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা ও গবেষণা করা হয় বংশগতিবিদ্যা নামক জীববিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখায়।মানবকল্যাণে নিয়োজিত জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে বংশগতিবিদ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্ময়কর শাখা।এই শাখার জ্ঞানের আলোকে একদিকে যেমন অধিক ফলনশীল ও বর্ধিত পুষ্টিমানসম্পন্ন ফসলী উদ্ভিদ উদ্ভাবন সম্ভব হচ্ছে অন্যদিকে সংকরায়নের মাধ্যমে উন্নতজাতের গৃহপালিত পশু-পাখি উদ্ভাবন অব্যাহত রয়েছে।আবার বিভিন্ন অনুজীবের জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সংক্রমণ ক্ষমতা রহিত করা হচ্ছে।এছাড়াও বর্তমানে শাখাটির বহুমুখী প্রয়োগ রয়েছে।

এবার বংশগতিবিদ্যার ভিত্তিপ্রস্তর প্রসঙ্গে যাওয়া যাক।কার হাতে রচিত হয়েছিল বংশগতিবিদ্যার ভিত্তি??অস্ট্রিয়াবাসী একজন ধর্মযাজক,গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের হাতে রচিত হয়েছিল বংশগতিবিদ্যার ভিত্তি।তাঁকে বংশগতিবিদ্যার জনক বলে অভিহিত করা হয়।

কেন তাঁকে জনক বলা হয়? মেন্ডেলের জন্ম ১৮২২ সালে অস্ট্রিয়ায়।তাঁর স্বপ্ন ছিল শিক্ষক ও বিজ্ঞানী হবেন।কিন্তু দারিদ্র‍্যের কষাঘাতে তাঁর সেই স্বপ্ন আর পুরণ হয়নি।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগ্রহণ ত্যাগ করে অস্ট্রিয়ার ব্রুন শহরে অবস্থিত গির্জায় শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন।১৮৫৭ সালে মেন্ডেল ৩৪ প্রকার মটরশুঁটি সংগ্রহ করে গির্জা সংলগ্ন বাগানে উদ্ভিদের বংশগতির রহস্য উদঘাটনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন।দীর্ঘ সাত বছরের কঠিন ও শ্রমসাধ্য পরীক্ষা শেষে তিনি বংশগতির দুটি সূত্র আবিষ্কার করেন।তাঁর পরীক্ষার সমস্ত কাগজপত্র ১৮৬৬ সালে ব্রুন ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটিতে জমা দেন।

আপাতদৃষ্টিতে অতি সাধারণ এ পরীক্ষার গুরুত্ব ঊনবিংশ শতাব্দীতে কেউ উপলব্ধি করতে পারেননি।১৮৮৪ সালের ৬ই জানুয়ারি,তাঁর সূত্রগুলো প্রতিষ্ঠা লাভের অনেক আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।তাঁর মৃত্যুর ১৬ বছর পর, ১৯০০ সালে তিন ভিন্ন দেশের তিন বিজ্ঞানী পৃথকভাবে কিন্তু একই সময়ে মেন্ডেলের গবেষণার ফলাফল পুনরাবিষ্কার করেন।বিজ্ঞানীরা হলেন নেদারল্যান্ডের উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিউগো ডে ভ্রিস,জার্মানির উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক কার্ল করেন্স এবং অস্ট্রিয়ার কৃষিবিজ্ঞানী এরিক শ্চের্মেক।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এ বিজ্ঞানীরা তাঁদের সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করে মেন্ডেলের গবেষণা সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলেন।এভাবে মেন্ডেলের গবেষণার মাধ্যমে বংশগতির মৌলিক সূত্রের আবিষ্কার ও প্রকাশের মাধ্যমে যে ভিত্তি রচিত হয় তার উপর নির্ভর করে জীববিজ্ঞানে বংশগতিবিদ্যা নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার বিকাশ ঘটে।এ কারণে গ্রেগর জোহান মেন্ডেলকে বংশগতিবিদ্যার জনক বলে অভিহিত করা হয়।

Related Posts

57 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.