নিম এর অনেকগুলো ঔষধি গুণাগুন ও ব্যবহার জেনে নিন

‘নিম’আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। নিম গাছের অসাধরণ সব গুণাগুণের জন্য বলা হয়ে থাকে,” যে বাড়িতে নিম গাছ আছে, রোগবালাই সে বাড়ি থেকে দূরে থাকে”। নিম গাছের পাতা , ডাল , রস , ছাল, ফুল প্রভৃতি সকল অংশই ভেষজ ঔষধ তৈরিতে অনেক কাজে লাগে।

আজকের এই পোস্টে নিমের অনেকগুলো ঔষধি গুণাগুন ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—

🔳 অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ হিসবে নিম এর ব্যবহার: বেশীর ভাগ মানুষই খুশকীর সমস্যায় ভোগে থাকেন । খুশকির সমস্যা সমাধানে নিম এর ব্যবহার ব্যাপক । পরিমাণ মতো পানি ও নিম পাতা নিয়ে সেদ্ধ করুন।  এরপর তা ঠাণ্ডা করে রাখুন। গোসলের সময় চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়ার পর এই জল দিয়ে মাথা পরিষ্কার করুন। মাথার খুশকী তাড়াতে এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি প্রক্রিয়া। এছাড়া মাথার ত্বকে অনেকেরই চুল্কানি ভাব হয়, নিমপাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগালে এই চুলকানি কমে।

🔳 দাঁতের সমস্যায় নিম এর ব্যবহার: প্রাচীনকাল থেকেই দাঁতের সুস্থতায় নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজার প্রচলন রয়েছে। নিমের পাতা ও ছালের গুড়া কিংবা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাত মাজলে দাঁত  মজবুত হয় এবং রক্ষা পায় নানারকম দন্ত রোগ থেকেও। কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভাল থাকে। নিম পাতার নির্যাস জলতে মিশিয়ে বা নিম দিয়ে মুখ আলতোভাবে ধুয়ে ফেললে দাঁতের আক্রমণ, দাঁতের পচন, রক্তপাত ও মাড়ির ব্যথা কমে যায়। যেকোন রকম দাঁতের সমস্যা সমাধানে নিম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

🔳 খোসপাঁচড়া কমাতে নিমের ব্যবহার : অনেকের ত্বকে খোসপাঁচড়ার সমস্যা হয়ে থাকে ।খোসপাচড়া হতে মুক্তি পেতে নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাঁচড়া চলে যায়। আবার নিমপাতা  বেটে গায়ে কয়েক দিন লাগালে চুুলকানির সমস্যা হতেে মুুক্ত হওয়া যায় ।

🔳 ব্রণ এর সমস্যা সমাধানে নিম এর ব্যবহার: ব্রণ এর সমস্যায় ভুগে থাকলে কিছু নিম পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে ব্রণে লাগিয়ে দিন। যতদিন ব্রণ না শুকোচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এভাবে লাগাতে থাকুন । মুখের যেকোনো ধরনের ফুসকুড়ি, ডার্ক স্পট এবং দীর্ঘমেয়াদি ঘা দূর করে নিম। তাইতও বর্তমানে নিম দিয়ে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করা হয় ।

🔳 ত্বক এর যত্নে নিমের ব্যবহার: বহুদিন ধরে রূপচর্চায় নিম ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বকের যেকোনো দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় । নিমপাতা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী। তাই ত্বকের সুরক্ষায় এর তুলনা নেই।  নিমপাতা সিদ্ধ পানি গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে নিন। এই পানি দিয়ে গোসল করলে ঘামের দূর্গন্ধ দূর হবে এবং ত্বকে হবে জীবাণু মুক্ত।

🔳 ডায়বেটিস ও হাইপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে নিমের ব্যবহার: নিমপাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। ডায়বেটিস রোগীদের জন্য নিমপাতার রস অত্যন্ত উপকারী । এছাড়াও রক্তচলাচল বাড়িয়ে হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে। হাই প্রেশার নিয়ন্ত্রণেও নিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

🔳 উকুন নাশক হিসেবে নিমের ব্যবহার : অনেকের মাথার ত্বকে উকুনের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় । উকুনের সমস্যা হতে মুক্তি পেতে নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগান। ঘণ্টাখানেক পর মাথা ধুয়ে ফেলুন। কয়েক দিন এভাবে লাগালে উকুন  মরে যাবে। এক্ষেত্রে নিমপাতা অত্যন্ত কার্যকর।

🔳 পেটের সমস্যায় নিমের ব্যবহার: নিমপাতা বেটে বড়ি করে রোদে শুকিয়ে  রাখুন। নিমপাতার বড়ি পেটের যেকোন সমস্যা সমাধানে খুবই উপকারী।

🔳 পোকামাকড়ের কামড়ে ব্যথানাশক হিসেবে নিমের ব্যবহার :  পোকামাকড় 
কামড় দিলে বা হুঁল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হবে। পোকা মাকড়ের দংশনে নিমপাতাকে ঘরোয়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ।

এছাড়াও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে, কৃমিনাশক হিসেবে , চুলের যত্নে সহ নানাবিধ সমস্যার সমাধানে নিম এর ব্যবহার ব্যাপক ।
সবদিক বিবেচনায় নিম এর গুণাগুন ও ব্যবহার সত্যিই অতুলনীয়।

আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের কাজে আসবে । পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

Related Posts

10 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.