গ্রামবাংলায় আমার ফিরে আসা

অনেকদিন পর গ্রামে যাচ্ছি।কাজের ব্যস্ততায় সময় হয়ে ওঠে না।তাই দীর্ঘ ৫ বছর ৩মাস ৮ দিন পর ছুটে চলেছি আমার প্রাণ,আমার গ্রামের টানে।

বাবা বলছিলেন গাড়িতে আসতে।কিন্তু আমি ট্রেনেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।আর ৫ জন সাধারণ মানুষের মত ট্রেনের জানালায় বসে বাইরে তাকাবো,দেখবো বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য্য।এই আশায় সকাল ৯টায় রওনা দিলাম। জানালার পাশেই সিট পেয়ে আমি তো মহাখুশি।সাথে এনেছি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’।

আমি বইটি যতবারই পরি মনের মধ্যে অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করে।আমার ছোটবেলাও দূর্গার মত দুরন্তপনায় কাটতো।আম,জাম,পেয়ারা বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও চুরি করে খাওয়ার মজাই আলাদা ছিল।সমবয়সীরা কত মজার খেলা খেলতাম!কানামাছি,বৌচি,পুতুল,রান্নাবান্না উফ আরো কত কী!সবুরদের উঠোনে একটা লাল পেয়ারার গাছ ছিল।সেই পেয়ারা খেতে গিয়ে কতবার যে মার খেয়েছি তার হিসেব নেই।সর্ষে ফুলের হলুদ রঙের মাঝে হেঁটে যেতাম হাতে এক ডজন লাল চুড়ি,চুলে লাল ফিতে দিয়ে……কাকার এনে দেওয়া লাল ফিতে দিয়ে মা চুল বেঁধে দিত। তোর মনে পড়ে সিধু?

ওহ্ আমি তো ট্রেনে।সিধু তো এখানে নেই।সিধু আমার ছোটবেলার বন্ধু।আমি ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।
মাঠে কৃষকেরা কাজ করছে।ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। কত সুন্দর দেখাচ্ছে ওদের!

ছোটবেলায় একদিন আমি,বাবা আর সিধু মেলায় গিয়েছিলাম।একটা খেলনা আমার খুব পছন্দ হয়েছিলো।কিন্তু বাবা বললেন,”ওটা তাড়াতাড়ি ভেঙে ফেলবি তো,নিস না মা।”আমার মন খারাপ হয়ে গেলো।পরদিন দেখি সিধু খেলনাটা আমার জন্য নিয়ে এসেছে।

আমি:তুই এটা কোথায় পেলি?
সিধু:বিষু কাকা দিয়েছে আমায়।তোর এটা পছন্দ তাই তোকে দিতে আসলাম।
আমি:কিন্তু এটা তো তোর।
সিধু:এটা আমাদের দুজনের।
এভাবে আমরা খুশি থাকতাম,আনন্দে মেতে উঠতাম।

আমি,মিমি,সিধু,বিন্তু,নিধি সবাই অনেক মজা করতাম।নদীতে গোসল করতাম,কাদার মধ্যে কে সাইকেল চালাতে পারে প্রতিযোগীতা করতাম,গান গাইতাম,ঘুরতাম আরো কত কি! সেই দিনগুলো কোথায় হারালো?আবার কি ফিরে পাবো সেসব মুহুর্ত?ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে এক চিলতে জল গড়িয়ে এলো।

এবার গ্রামে গিয়ে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি,খোঁপায় বেলিফুলের মালা আর হাতে লাল রেশমি চুড়ি পড়ে সারা গ্রাম ঘুরবো। সর্ষে ফুল দেখব।উফ!লোভ হচ্ছে।এখন শীতকাল।পিঠাপুলি খাব অনেক।সকালে খেজুরের রস দিয়ে মুড়ি খাওয়ার মজাই আলাদা।রোদ পোহাবো।বিকেলে ঘুড়ি উড়াবো।রাতে তারা গুনবো,খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাবো।অসংখ্য রাত না হয় শুধু বোনদের সাথে গল্প করেই কাটিয়ে দেবো।

  • এসব ভাবতে ভাবতে কখন পৌঁছে গেছি টেরই পেলাম না।পাশের ভদ্রলোকের কণ্ঠে আমার ঘোর কাটলো।ট্রেন থেকে নেমে সিধুকে দেখে এগিয়ে গেলাম………

Related Posts

9 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.