কস্তুরি হরিণের আশ্চর্য সুগন্ধি প্রকৃতির এক অনুপম বিস্ময়!

কস্তুরি হরিণ প্রকৃতির এক আশ্চর্য বিস্ময়কর প্রাণী। বিস্ময়কর এর সুগন্ধি! পৃথিবীতে সুগন্ধি সৃষ্টিকারী যতো প্রাণী আছে, তারমধ্যে কস্তুরি হরিণই শ্রেষ্ঠ। কস্তুরি স্বর্ণের চেয়েও দামী। এক কেজি স্বর্ণের দাম বর্তমান বাজারে যেখানে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা; সেখানে এক কেজি কস্তুরির দাম প্রায় সত্তর লক্ষ টাকা। তারচেয়েও বড় কথা, টাকা দিলে স্বর্ণ পৃথিবীর প্রায় সবখানেই পাওয়া যায়। কিন্তু কস্তুরি পৃথিবীর সবখানে পাওয়া যায় না।

পৃথিবীতে অল্প কিছু জায়গায় কস্তুরি হরিণ পাওয়া যায়। তার মধ্যে হিমালয়ের পাদদেশ অন্যতম। ভারতের হিমাচল প্রদেশের সুগভীর অরণ্য, হিমালয়ের পাদদেশে নেপালের অরণ্য এবং কাশ্মীরের গভীর অরণ্যেও কস্তুরি হরিণের দেখা মেলে। এছাড়া আসামের কামরূপ-কামাখ্যার গভীর অরণ্যেও কিছু কস্তুরি হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। তবে নির্বিচারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করার কারণে কস্তুরি হরিণ আজ ভয়ংকর বিপন্ন প্রাণী। কস্তুরি হরিণ ধরা নিষিদ্ধ হলেও অসাধু শিকারীরা অতি গোপনে ফাঁদ পেতে কস্তুরি হরিণ ধরে। মানুষের অতি লোভের কারণে কস্তুরি হরিণ আজ পৃথিবী থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত হতে চলেছে। অথচ প্রকৃতির বিস্ময়কর সুগন্ধি সৃষ্টিকারী কস্তুরি হরিণ একটি দেশের মূল্যবান সম্পদ।

যদি যথাযথভাবে এই কস্তুরি হরিণ সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে সুগন্ধি উৎপাদনকারী এই মায়াবী কস্তুরি হরিণ দেশের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে অর্থনীতিতে অপরিসীম অবদান রাখতে পারে। প্রতি বছর কস্তুরি হরিণের সুগন্ধমোদিত কস্তুরি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। তাছাড়া পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়ও এই বিরলতম সুগন্ধিযুক্ত প্রাণীটি রক্ষা করা প্রয়োজন।

পুরুষ কস্তুরি হরিণের নাভিতে খুব ছোটোবেলাতেই একটি গুটির জন্ম হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথেই এই গুটিও বড় হতে থাকে। পুরুষ কস্তুরি হরিণের বয়স যখন দশ বছর হয়, তখন তার যৌবনকাল শুরু হয়। আর যৌবনের লক্ষ্মণ হিসেবে নাভিতে কস্তুরি বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয়। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে কস্তুরির আশ্চর্য মোহনীয় সৌরভ। এই সৌরভ এতো ব্যাপক হয় যে, সুগন্ধে অস্থির হয়ে কস্তুরি হরিণের পাগল দশা হয়। এ অবস্থায় মেয়ে কস্তুরি হরিণের সান্নিধ্যে এসে তারা শান্ত হয়।

এভাবেই তাদের বংশবৃদ্ধি হয়। কস্তুরির যৌবন ও রতিশক্তি বৃদ্ধি করার এই আশ্চর্য ক্ষমতার কারণেই মুঘল সম্রাট থেকে শুরু করে পৃথিবীর শক্তিশালী নৃপতিগণের কাছে কস্তুরি খুবই মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই প্রাচীণকাল থেকেই যৌবন শক্তিবর্ধক ও উত্তেজক হিসেবে কস্তুরি অনেক আদরণীয় সুগন্ধি।

কস্তুরির সুগন্ধি ক্ষমতা এতই বেশি যে, তিন হাজার মণ খাবারে একদানা কস্তুরি মেশালে সেই ঘ্রাণ পুরো খাবারে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, সেই খাবার খেলে শরীরের রোমকূপেও ঘ্রাণ ফুটে বের হয়। এমনকি শরীরের ঘামেও কস্তরির মায়াবী ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। অত্যন্ত উত্তেজক ও শক্তিবর্ধক এই কস্তুরির ঘ্রাণ কাঁচা অবস্থায় এতোটাই তীব্র যে, যখন শিকারীরা কস্তুরি হরিণ শিকার করে তাদের নাভি থেকে কস্তুরি পিণ্ড কেটে নেয়; তখন মুখে মোটা কাপড় খুব ভালো করে পেঁচিয়ে নেয়। কেননা, কাঁচা কস্তুরির ঘ্রাণ এতই তীব্র যে, স্নায়ুতন্ত্র অসাড় হয়ে মানুষ মৃত্যুবরণ করার অনেক রেকর্ড আছে।

যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক সুগন্ধির এই বিস্ময়কর উৎস কস্তুরি হরিণ মানুষের অপার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মানুষ সুঘ্রাণ, সৌন্দর্য, শক্তিমত্তা, উত্তেজনা ও উদ্দীপনাময় যৌবনশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য হাজার হাজার বছর ধরে কস্তুরি ব্যবহার করে আসছে। কস্তুরি হরিণ সত্যিই প্রাকৃতিক সুগন্ধির অনুপম এক অনন্য বিস্ময়কর উৎস।

সাফিকা শাহরিন হক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

Related Posts

7 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.