কবিতা সিস্টেমে পরে গেছি

সিস্টেমে পরে গেছি
লেখক-আব্দুল্লাহ্

আমি ভ্যান চালায়,
বিন্দাস জীবন আমার কোনো টেনশন নাই।
যখন থেকে এসেছে কোভিড নাইনটিন,
সালা কষ্টে কাটছে দিন,
তারওপর চেপেছে হাজার টাকার ঋণ।
ভুলেছি নিজের নেম,
করোনা তুমি করে দিয়েছো সিস্টেম।

সেন্টু গেঞ্জি লুঙ্গি আর বাধা ছিড়া সেন্ডেল পায়ে,
বের হলাম ভ্যানটা নিয়ে শুধুই পেটের দায়ে।
যাত্রী নাই একটাও রোডে,
বসে আছি তাই অফ মুডে,
হোটেল শোরুম বন্ধ সবই নিষেধ বাইরে চলা,
মোড়ে মোড়ে থাকছে শুধু বিড়ির দোকান খেলা।
একটু পরপর পুলিশ আসে,
লুকিয়ে যাচ্ছি আসেপাশে,
সব মিলিয়ে এখন সালা আজব কাহিনী,
সকাল থেকে বিড়ি খাওয়ার টাকাও উঠেনি।

আতঙ্কে করোনার,
সিস্টেম হয়ে গেছে সবার।
ঘরে থাকার হুকুম দিচ্ছে হাসিনা সরকার,
পানিও নাই ঘরে আমার নাই কোনো আহার,
ক্ষিধার জ্বালায় থেকে থেকে পেট দিচ্ছে হুঙ্কার,
দরকার এ দুঃসময়ে একটুখানি ডাল ভাতের দরকার।
ক্ষিধায় দিন কেমনে কাটে কেমনে পেট চলে,
সিস্টেম আমার হয়ে গেছে করোনার ছোবলে।

করোনা তোমার কি আবিষ্কার,
কোয়ারেন্টাইনের নামে আমার বাড়িকে করেছো কারাগার,
তোমার কিদোষ আর,
যখন ডাকাত দলের আরেক নাম আইইডিসিআর।

উহ্ পেটের জ্বালায় স্থির আর থাকা যায়না ঘরে,
তাই ছিড়া লুঙ্গিটা পরে,
গেলাম চলে বাহিরে,
কিন্তু ছিলনা আমার প্রোটেকশন,
আমাকে দেখেই এমন সময় পুলিশ প্রশাসন,
নিয়ে নিলো একশন।

লাফ মেরে এক ভুড়ি আলা পুলিশ এসে,
ধরলো আমায় কষে,
পাছায় দিলো দু বারি,
লেগে গেলো কিরিকিরি,
বললো বেটা সিস্টেম করে দেবো বাড়ি পালা তাড়াতাড়ি।

কান ধরালো ছবিও তুললে ইজ্জত সব নিলো,
দেখে আমায় আর বাদর গালা সব দৌড় দিয়ে পালালো।
লুকিয়ে লুকিয়ে দুর থেকে,
বাদর গালা আমায় দেখে,
খিলখিলিয়ে হাসে,
খাবারও নাই কাপরও নাই ইজ্জতটাও গেলে শেষে।

সুযোগ বুঝে নেংটি মেরে দিলাম জোড়ে দৌড়,
বোমা মেরেই দিতো বুঝি বেচে গেছি বড় জোড়।
জান কাপছে ঘাম ঝরছে দৌড়ে যাচ্ছি বাড়ির দিকে,
ভয়ে আমার পাও কাপছে টেনশন আমার চোখে মুখে।
পুলিশ সালার সিস্টেমে পরে লাগলো মুখে কালি,
রাগের মাথায় মনে আসছে যত মুখস্ত আছে গালি।

বাড়ির ভিতর ঢুকে,
ফু দিয়ে বুকে,
দাড়িয়ে আয়নার সামনে,
আর ভাবছি মনে মমে,
এ বেইজ্জতি দুর হইবে কেমনে?
মগজে হঠাৎই আইলো এক বুদ্ধি,
মাথা নাড়া করিলে হইতো হইবে আত্মাশুদ্ধি।

যেই ভাবা সেই কাজ,
খারাপ যতই লাগুক আজ,
বাচাতে ইজ্জত সারা,
জীবন বাজি রেখে আমি করে ফেললাম নাড়া।

ঘরে একটা দানাও নাই মনে একটাই চিন্তা,
আমার ঘরে নুন আনতে কেনো ফুরায় পানতা?

চিন্তায় চিন্তায় রিমোট হাতে অন করলাম টিভি,
নিউজ চলছে অসহায়দের ত্রাণ দিচ্ছে টিসিবি।
খবর শুনে খুশিতে আমার হঠাৎ লেগে গেলো মুতা,
তাই খুলে পায়ের জুতা,
চললাম টয়লেটে,
ভিতর ভিতর মনটা আমার আনন্দে উঠলো মেতে।
মুততে বসে ভাবছি আমি শুধুই ত্রাণের কথা,
কোথায় পাবো কেমনে পাবো চুলকাচ্ছি শুধু মাথা।
ভাবতে ভাবতে মুতা হলো শেষ,
আমার সোনার বাংলাদেশ।

খোজ চালালাম মিললো উপায়,
আাগামিকাল দুপুর দুটায়,
কলমুডাঙ্গার বটতলাতে,
চেয়ারম্যানের চোর জামাতে,
হইবে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচী,
মন চাচ্ছে লুঙ্গি খুলে মনের সুখে নাচি।

দুপুর পেরিয়ে বিকাল হলো বিকাল পেরিয়ে রাত,
এখন অব্দি পেটে অভাগার পরেনি একটাও ভাত।

পরের দিন, সময় পার খুব কঠিন, যখন বেলা প্রায় দেড়টা,
ব্যাগ বস্তা যত ছিল গামলা সহ বারটা হলো এবার ধরলাম হাঁটা।

একি দেখছি সর্বনাশ কত্তো বড় লাইন,
স্থির করলাম যাই হবে হোক, আমি কি আর ভদ্রলোক?
ত্রাণ আমি নিবই আজ ভেঙ্গে হলেও আইন।

হঠাৎ করে,
চেয়ারম্যান দাঁড়িয়ে উচ্চ স্বরে,
বললো ত্রাণ মাত্র প্যাকেট আশি,
কিন্তু লোকতো দুশোর বেশি,

আমার মাথায় হাত,
ত্রাণের লোভে মনের ক্ষোভে ভিক্ষুকেরা সব লেগে গেলো সংঘাত।
বাঁচাতে প্রাণ লাগবেই ত্রাণ,
যুদ্ধে আমি নেমে পরলাম।
মনে আমার দৃড় সংকল্প,
ভয় লাগছে মরন ডাকছে গায়ে যে শক্তি অল্প।

চারিদিকে শুধু মারামারি,
লাথ ঘুষি আর কাড়াকাড়ি,
ত্রাণের জন্য মার খেলেও ভরবেতো বাড়ির শুণ্য হাড়ি।

চল্লিশটা লাথ বিশটা ঘুষি,
পৌছে গেছি কাছাকাছি,
হঠাৎই এক দানব দেহি,
মারলো এমন লাথ,
লুঙ্গি ছিড়লো জ্ঞান হারালো সালা আমিতো অবাক।

জ্ঞান ফিরিয়া হাই,
আর একটা প্যাকেটো নাই,
শুধু পরে আছি আমি অসহায়।

জোড় জার মুলুক তার,
তাই পেয়েছে ঔসব জানোয়ার,
ফুটা আমার কপাল,
এই অভাগার ভাগ্যে নাই আর ত্রাণের চাল।

শোনা গেলো কলমুডাঙ্গার চোর চেয়ারম্যান,
চুরি করেছে এক ট্রাক চাল আর ডাল তিন ভ্যান।
সালা করেছে সিস্টেম,
দুটা নয় তিনটা নয় চুরি করেছে ছয় সাতটা আইটেম।
যতই খাক ধরা,
অভাগাদের ভাগ্যে শুধু না খেয়েই মরা।

বসে বসে আমার এখন এই প্রার্থনা,
করোনা ও করোনা,
এই চাল চোরদের কেনো ধরোনা?

Related Posts

23 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.