সন্তানের হক নষ্ট করার শাস্তি কি ? ইসলামের মতে সন্তানের হক

আজকে আমরা জানবো সন্তানের হক নষ্ট করার শাস্তি কি ? ইসলামের মতে সন্তানের হক আসলে কি? সন্তান হচ্ছে আল্লাহ- তায়ালার নিয়ামত। সন্তানের যেমন মা- বাবার প্রতি দায়িত্ব আছে তেমনি সন্তানেরও হক রয়েছে। এই পৃথিবীতে আগমনের সাথে সাথে সে তার অধিকার নিয়ে জন্মায়। তাই সন্তানের সেই হক অবশ্যই পিতা- মাতার আদায় করতে হবে। কেবল জন্ম দিলেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং তাকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং দ্বীনের শিক্ষা দেয়া পিতা- মাতারই দায়িত্ব।

ইসলামের মতে সন্তান জন্মের পর যে হক আদায় করতে হবে

সন্তানের হক নষ্ট করার শাস্তি

১| কানে আযান দেয়া

সন্তান জন্মানোর পর তার কানে আযান দেয়া অভিভাবকের নৈতিক দায়িত্ব। এর মধ্য দিয়ে সন্তানের নিকট আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়া সম্ভব। নবজাতক ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, সন্তান জন্মানোর পর তার কানে আযান দিতে হবে। এটি সন্তানের হক। আযান দেয়া হয় যাতে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে না পারে।

২| নাম রাখা এবং আকিকা করা

একটি শিশু জন্মানোর পর তার সুন্দর আর অর্থবহ নাম রাখতে হবে। এই নামই হবে তার পরিচয়। এরপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবাই করতে হবে।

এতে আল্লাহ্ খুশি হন এবং সন্তানের ভবিষ্যতের প্রতি বরকত দেন।

সন্তান জন্মানোর পর তার নামে আকিকা করার হক সে আল্লাহর কাছ থেকেই নিয়ে আসে।

পিতা- মাতার এই হক আদায় করতে হবে। আকিকা করা সুন্নাত।

৩| খাতনা করা

ছেলে সন্তান হলে তার অবশ্যই খাতনা করতে হবে। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী শিশু বয়সেই ছেলে সন্তানের খাতনা করে ফেলা উচিত। জন্মের সাত দিন পর থেকেই খাতনা করা যাবে।

হাদীসে আছে- মহানবী (স) তার নাতি হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার খাতনা করিয়েছিলেন জন্মের সাতদিন পর।

৪| সদকাহ করা

একটি নতুন প্রাণ মানে আপনার সন্তান পৃথিবীতে আসার পর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কিছূ দান- সদকাহ করতে হয়। জন্মের সাত দিন পর বাচ্চার চুল কেটে সেই পরিমাণ অর্থ দান করার নিয়ম রয়েছে।

তা সম্ভব না হলে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু দান- সদকাহ করা উচিত।

এতে গরীব- দুঃখীরা আপনার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। অন্যদিকে এটা আপনার সন্তানের হকও বটে।

৫| সন্তানকে নামায ও কুরআন শিক্ষা দিন

পিতা- মাতা হিসেবে সন্তানকে নামায ও কুরআন পাঠ শেখানো আপনার দায়িত্ব। তাকে ইসলামের পথে পরিচালিত করুন। তার রবের ইবাদত করা আর রাসুল (সা:) সম্পর্কে জানার অধিকার তার আছে।

এই হক থেকে আপনার শিশুকে বঞ্চিত করবেন না।

৫| সন্তানকে ভালোবাসুন

মনে রাখবেন, সন্তান আল্লাহর নিয়ামত। সে নিজের ইচ্ছায় এই পৃথিবীতে আসেনি। আপনি তাকে জন্ম দিয়েছেন। অতএব, সন্তানকে ভালোবাসুন।

সে ছেলে হোক বা মেয়ে সবই আল্লাহর সৃষ্টি। তাকে অবহেলা করবেন না।

সন্তানদের মাঝে বৈষম্য করলে এবং তাদের অবহেলা করলে শরীআহ মোতাবেক সন্তানের হক লঙ্ঘন করা হয়।

কারণ সে জন্মের পর মা- বাবার কাছ থেকে ভালোবাসা পাবার অধিকার রাখে।

৬| আপনার বাচ্চাকে দ্বীনের পথে চলতে শেখান

সন্তানকে কেবল নামায এবং কোরআন শিক্ষা দিলেই হক আদায় হয়ে যায় না। তাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করুন। এর মহিমা ব্যখ্যা করুন।

ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দিন আর খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখুন।সর্বোপরি তাকে দ্বীনের পথে চলতে সাহায্য করুন।

৭| সন্তানকে শিষ্টাচার এবং আদব- কায়দা শেখান

একজন সন্তান তখনই মানুষের মতো মানুষ হবে যখন সে সঠিক শিক্ষা পাবে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি তাকে শিষ্টাচার এবং আদব- কায়দা শেখান।

অন্যের সাথে ভালো আচরণ করতে শেখান। নৈতিক শিক্ষা দিন। এটা সন্তানের হক। আপনি অবহেলা করতেপারেন না।

৮| লালন- পালন করা এবং সক্ষম করে গড়ে তোলা

সন্তান জন্ম দেবার পর প্রাপ্তবয়স্ক আর সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত তাকে লালন- পালন করা পিতা- মাতার দায়িত্ব।

অনেকেই আছেন সন্তান জন্মের পর তাকে ছেড়ে চলে যায়।

এতে কিন্তু সন্তানের হক আদায় হয় না। বরং গুনাহ হবে।

আপনি সন্তান জন্ম দিয়েছেন। সেই দায়িত্ব থেকে আপনি পালাতে পারেন না। আপনি সন্তানকে ছেড়ে চলে যাবার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামতকে অবহেলা করা। এছাড়া আপনার সন্তান যে হক নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছে তা আদায় না হলে মা- বাবা হিসেবে আপনি গুনাহর ভাগীদার হবেন।

৯| ইনসাফ করা

একাধিক সন্তান থাকলে তাদের সমান সুযোগ- সুবিধা দেয়াও পিতা- মাতা হিসেবে আপনার কর্তব্য। এমনকি সম্পত্তি বন্টনের সময়ও বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং ইনসাফ করতে হবে।

জাগতিক কারণে সব সম্পদ খরচ করে ফেললে আপনার সন্তানের প্রতি অবিচার করা হবে।

তার হক নষ্ট করা হবে।আপনার সম্পদে অবশ্যই আপনার সন্তানের হক রয়েছে।

তাই সম্পত্তি বন্টনের সময় ইনসাফের বিষয়টি মাথায় রাখবেন।

১০| বিবাহ দেয়া

এছাড়া সন্তানের অভিভাবক হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তাকে বিয়ে দেয়া এবং নতুন জীবনে পরিচালিত করা আপনার দায়িত্ব। তাকে বিয়ে দেয়া এবং সংসারে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা আপনার দায়িত্ব। কিন্তু ইচ্ছে করে উপযুক্ত হবার পর তার বিয়ে না দেয়া এবং টাকা- পয়সার সমস্যার কথা বলে নানা উছিলায় বিয়ে আটকে রাখলে সন্তানের হক নষ্ট করা হবে।

১১| দোয়া করা

সন্তানের মঙ্গলের জন্য সব মা- বাবাই দোয়া করেন। আল্লাহর কাছে সন্তানের জন্য সাহায্য চান। সন্তানের মঙ্গলের জন্য তারা এই আমল করেন। ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী এই দোয়ার নিয়ামত পাবার হক সন্তানের রয়েছে।

সন্তান তার মা- বাবার জন্য দোয়া করবে। আমাদের সমাজে মা- বাবার হক নিয়ে আলোচনা হয়।

কিন্তু সন্তানের হক নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয় না। সন্তান মা- বাবার ভালো চাইবে।

তাদের প্রতি সকল দায়িত্ব পালন করবে। একইভাবে মা- বাবাও সন্তানের ভালোর জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন।

১২| পাপকাজ এবং শরীআহ বিরোধী কাজ থেকে বিরত রাখা

সন্তানকে পাপকাজ থেকে দূরে রাখাও মা- বাবার কর্তব্য। তাকে বোঝাতে হবে।

প্রয়োজনে শাসন করা যেতে পারে। কিন্তু সন্তানকে বিপথে পরিচালিত হতে দেয়া যাবে না।

আগেই বলেছি, সন্তান তার ভাগের হক নিয়েই এই পৃথিবীতে জন্মায়।

সেই হক আদায় না হলে এবং তাদের প্রতি অবিচার ইসলামের বিধি অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে আখিরাতে।

সন্তানের হক নষ্ট করার শাস্তি কি ?ইসলামের বক্তারা কি বলে?

ইসলামের একজন বক্তা শায়েখ আবদুল্লাহ বলেছেন- সন্তানের হক আদায় না হলে এবং ইচ্ছাকৃত তাদের প্রতি অবিচার করা হলে মা- বাবাকে শাস্তি পেতে হবে। তারা জাগতিক কারণে এবং নিজেদের সুখের জন্য সন্তানের হক নষ্ট করতে পারেন না।

সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ করতে হবে। হাদীসে আছে- মহানবীর কাছে এক সাহাবী এসে বলেন- আমার ছেলেকে আমি সম্পদ দিয়েছি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন- তোমার সকল সন্তানকে সেই সম্পদের ভাগ বুঝিয়ে দিয়েছো? সাহাবী বলেন- না। দেই নাই। তখন রাসুল (সা) বলেন- তাহলে তোমার হক আদায় হয় নি।

সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করতে হবে। সম্পদের সমবন্টন হবে।

আপনি সম্পদের মালিক। কিন্তু যেভাবে ইচ্ছা করতে পারেন না সম্পদের বন্টন।

প্রত্যেকের হিস্সা অনুযায়ী সম্পদ বন্টন করতে হবে। ছেলে হোক এবং মেয়ে হোক।

প্রত্যেকের সম্পদ তাদের হক অনুযায়ী ভাগ করে দিতে হবে।

কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। কেয়ামতের দিন বান্দার হক আদায় না করা হলে আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।

হোক সে আপনার সন্তান। কিন্তু তার হক নষ্ট করলে আপনার ইবাদত- বন্দেগিও কোনো কাজে আসবে না।

কোনো সন্তানকে বেশি পছন্দ করেন। আবার কাউকে কম পছন্দ করেন।

নিজের খেদমতের জন্য সন্তানদের প্রতি অবিচার করবেন।

একজনের উপর বেশি দায়িত্ব জোরপূর্বক চাপিয়ে দিবেন। আল্লাহর সৃষ্টির হক নষ্ট করবেন। এই অবিচার আল্লাহ সহ্য করবেন না।

তো আজকে আমরা জানলাম সন্তানের হক নষ্ট করার শাস্তি কি এবং ইসলামের মতে সন্তানের হক আসলে কি? এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

6 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.