রোজা রাখার অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা

অনেকেই বলে থাকে, পুরো রমজান মাস রোজা পালনের পর তুলনামূলক বেশ ফুরফুরে ও সুস্থতা অনুভব করে। এর পেছনের কারণটা আসলে কি? রোজা থাকার কারণে দিনের সিংহভাগ সময় যেকোন ধরনের খাবার গ্রহণ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হয়। এই নিয়মটিই শরীরের জন্য বয়ে আনে বড় ধরনের কিছু উপকারিতা। যার দরুন নিজেকে আগের থেকে বেশি সুস্থ ও প্রাণবন্ত মনে হয়।

রোজা রাখার ফলে আমরা যেসব উপকার পায় সেগুলোর মধ্যে কিছু উপকারিতা আজ আমরা জানবো। তো চলুন বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাক।

ডায়বেটিস: গত বছরের অর্থাৎ ২০১৯ সালের এক পরিসংখ্যান মতে সম্পূর্ণ বিশ্বে ডায়বেটিসে আক্রান্ত হয় প্রায় ৪৬৩ মিলিয়ন পূর্ণবয়স্ক মানুষ, যার মধ্যে প্রায় ১.১ মিলিয়ন রয়েছে শিশু ও নবজাতক। আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়া এই ডায়বেটিসের প্রথম ও প্রধান কারণ হলো খাদ্যাভ্যাসে অসচেতনতা। ঠিক একইভাবে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। জার্নাল অব অ্যাপ্লাইড ফিজিওলজি জানিয়েছে, রোজা রক্তে চিনির মাত্রা কমায় ও ইনস্যুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। যা ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয়।

হৃদযন্ত্র: দযন্ত্রেরহৃদরোগজনিত কারণে মৃত্যুর হার অনেক বেশি এবং অধিকাংশ হৃদরোগের শুরু হয় মূলত অনিয়ন্ত্রত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ফলে। রোজা রাখার ফলে লম্বা সময় আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। এরপর অল্প সময়ের মাঝে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে জোর দেওয়া হয় বিধায় অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাত্রা অনেকাংশে কমে যায়। যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে কমে যায় হৃদরোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা।

অক্সিডেটিভ স্ট্রেস: অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বলতে শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি অক্সিজেন রেডিক্যাল গড়ে ওঠার সমস্যাকে বোঝায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম আমাদের শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে বিশেষভাবে অবদান রাখে। গবেষকেরা তাদের পরীক্ষা থেকে দেখেছেন যে, রোজা থাকার দরুন শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যানজাইম নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়। যা ওবেসিটির সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ক্যানসার: কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যালরি গ্রহণ ঠিক রেখে রোজা পালনে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। রোজা রাখার ফলে বিশেষত নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়া আরো দেখা গেছে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত না খেয়ে থাকার কারণে অটোফেজি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, এতে করে শরীরের মৃত কোষগুলো পরিষ্কার হয়। যা টিউমার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং রেডিও ও কেমোথেরাপিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

প্রদাহ কমাতেঃ ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহকে ছোট করে দেখা একেবারেই ঠিক হবে। কারণ এই প্রদাহ থেকেই ওবেসিটি, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মত বড় ধরনের সমস্যার সূত্রপাত ঘটে। রোজা রাখার ফলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত না খেয়ে থাকার কারণে অ্যাডিপনেকটিন নামক এক প্রকার হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনটি প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। গবেষকেরা আরো দেখেছেন, রোজা রাখার কারণে শরীরে প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি মলিকিউলস হ্রাস পায়, যা ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখে।

Related Posts

5 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.