রান্না বিরম্বনা

ছোট বোনের কথা শুনে অামিতো পুরাই অবাক! ঘুম থেকে ডেকে তুলেই বলা শুরু তুই কি বিয়ে করবি নাকি অামি বিয়ে করে ঘরে জামাই বাসায় নিয়া অাসবো। তোকে অাজ বিকেল পর্যন্ত সময় দিলাম কি করবি ভেবে দেখ বলে হনহন করে হেঁটে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
.
.
–জীবন থেকে সাতাশ বছর শেষ হয়ে গেছে, ছোট বোনের বয়স একুশ ছুঁই ছুঁই। অামার এতো দিনেও এটা খেয়াল ছিল না। সবে মাত্র পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরিতে জয়েন করছি।
.
.
— ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে যেয়ে নাস্তা চাইলাম। অাম্মু বলে নাস্তা বানানো হয়নি তার মাথা ব্যথা।
নিজের টা নিজেকে বানিয়ে নিতে।
— মা অামি কি কোন দিন নাস্তা বানাইছি?
— এখন থেকে বানিয়ে খাবি।
— অামি এসব পারি না তুমিতো জানো।
— জেনে লাভ কি বল অামার তো বয়স হয়েছে।
— অতঃপর অার কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে রওনা দিলাম।
.
.
— খুঁজে চাপাতি, চিনি বের করে চা বানিয়ে নিয়ে অাসলাম।
অাহ অাজ নিজের বানানো প্রথম চা খাবো ভাবতেই কেমন জানি শিহরিত হচ্ছি। নিজের চা নিজেই বানিয়ে খাবো চিন্তা করে চায়ে চুমুক দিতেই। মনে হলো পেটের ভিতর যা অাছে সব বের হয়ে অাসবে। অহ করতেই মা অার ছোট বোন হেসে দিলো।
অামি চিনির বদলে চায়ে লবন দিয়েছি।
.
.
— অামি কোন কথা না বলে রুমে চলে অাসলাম। চিৎকার করে ছোট বোনকে ডাক দিলাম রিমি এই রিমি।
— কি হইছে এতো চেচামেচি করছো কেন?
— না মানে অামার শার্টটা খুঁজে পাচ্ছি না। একটু খুঁজে দিবি?
— অামি পারবো না নিজের চোখ অাছে না খোঁজে দেখো। অামার পড়া অাছে বলেই ছোট বোন হনহন করে হেঁটে তার রুমে চলে গেল।
.
.
— অামি কোন রকমে নিজেকে সামলে নিলাম, যে বোন সারাদিন অামার এটা সেটা করে দিতে ব্যস্ত থাকতো অাজ সে বোন সব উল্টাপাল্টা কথা বলছে। অামার মাথায় কিছুই কাজ করছে না।
.
.
— একবার তিন্নির সাথে কথা বলা দরকার। ফোনটা বের করে তিন্নি কে কল দিলাম। ফোন ধরতেই,
— হ্যালো তিন্নি তুমি কি রান্না করতে পারো?
— তিন্নি রেগে রান্না করতে পারবো না কেন?
— না মানে অামি দুপুরে রান্না করবো তুমি কি অামাকে হেল্প করতে পারবে ফোনে ফোনে?
— তুমি রান্না করবে কেন?
— না মানে অাম্মু অসুস্থতো তাই রান্না করে খেতে হবে।
— ঠিক অাছে রান্নার সময় ফোন দিও।
— অাচ্ছা তাহলে রাখি বলে ফোনটা রেখে দিলাম। যাক রান্না করে সবাইকে দেখিয়ে দিবো বলে দরজা টা লাগিয়ে। ইউ টিউবে কিছু রান্নার ভিডিও দেখলাম।
.
.
–অার সব কিছু খাতায় নোট করে নিলাম। সে অনুযায়ী টুকটাক বাজার ও করে নিয়ে অাসলাম। দুপুরে সব কিছু রেডী করে রান্না ঘরে চলে অাসলাম।
এদিকে ছোট বোন একটু পর পর উকি দিচ্ছে রান্না ঘরের দিকে অার মিটমিট করে হাসছে। অামিও মনে মনে হাসছি অার বলতাছি হাসতে থাক হাসতে থাক অাজ তোদের খায়িয়ে তাক লাগিয়ে দিবো এমন খাবার বানাবো।
.
.
— চুলায় রান্না বসিয়ে তিন্নিকে কল দিলাম, তিন্নির কাছ থেকে শোনে শোনে ঝাল ফ্রাই অার বিরিয়ানি রান্না বসিয়ে দিলাম। অাহ কি সুন্দর ঘ্রাণ বের হইছে খাবারের। ঘ্রাণ বলে দিবে অামিকত বড় রাধক হয়ে গেছি। ছেলে মানুষ যে কতবড় বড় ফাইভ স্টারের মাস্টার সেফ এটা অামার বোন অার মা মনে হয় ভুলে গেছেন।
.
.
— অবশেষে প্রাই দেড় ঘন্টা পর সব রান্না শেষ করে সালাদ বানিয়ে টেবিলে পরিবেশন করলাম। যেমন করে ইউ টিউবে দেখেছি। অাহা অার কিছু রান্না শিখে গেলেই অামি পাকা সেফ হয়ে যাবো। মাঝে মাঝে তিন্নিকেও রেধে খাওয়াবো।
সব শেষ করে খাবার পরিবেশন করে বাবা মা অার ছোট বোনকে ডাক দিলাম।
.
.
— ছোট বোন অামার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে অাছে। অামি মনে মনে হাসছি, তারপর সবাই এক সাথে খেতে বসলাম। বাবা, মা অার ছোট বোনকে খাবার দিলাম। তারা এক বার খাবার মুখে দিয়ে অামার দিকে তাকিয়ে অাছে। অাহা তারা বুঝতে পেরেছে অামার হাতে জাদু অাছে। অামি মুরগীর রানটা নিয়ে মুখে দিতেই সকালের মত ভিতর থেকে সব বেরিয়ে অাসার অবস্থা হলো।র
.
.
— বাবা বলে উঠলেন বুঝলি বাবা ঘরের কাজ মেয়েদেরই মানায়, তুই এক কাজ কর বিয়ে করে নে। তবেই তো সব জামেলা শেষ। অামি মনের দুঃখে বলে দিলাম এতো কষ্ট করে রান্না করে যেহেতু খেতে পারলাম না তখন বিয়েতো এখন দেখি করতেই হবে। ছোট বলে উঠলো মা কাজ হয়েছে ফ্রীজ থেকে খাবার গুলো গরম করে নিয়ে অাছি। অামিও বুঝতে পারলাম তাদের ফাদে অামি পরেছি।

Related Posts

4 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.