ভৌত জগতের প্রকৃতি।

প্রকৃতি: বিস্তৃতি অর্থে প্রাকৃতিক জগৎ,ভৌত জগৎ বা পার্থিব জগতের সমতুল্য।প্রকৃতি বলতে ভৌত জগতের ঘটনাবলি এবং ব্যাপকভাবে জীবনকে বুঝায় যার পরিমাপের সীমা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা থেকে শুরু করে মহাজাগতিক অবয়ব পর্যন্ত।জগতের যেসব বিষয় বস্তু বিরাজমান এবং যা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে নানা কারণে পরিবর্তিত হয়,যেমন পৃথিবীর অবহাওয়া,ভূপৃষ্ঠ,বিভিন্ন প্রকার জীবন্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী রাজ্য,প্রাণহীন জড় পদার্থ ইত্যাদি প্রকৃতির অন্তর্ভুক্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশ,বন্য জীবন,পাহাড়-পর্বত,বনভূমি,সমুদ্র সৈকত যা কিছু আছে এবং যেগুলো এই পৃথিবীর রূপ,রস,গন্ধে,সৌন্দর্যে,নান্দনিকতায় আমরা বিমোহিত,আবার এর রুদ্রমূর্তিতে,প্রাকৃতিক দূর্যোগ কখনো বা আমরা ক্ষতবিক্ষত।

সৌরজগৎ : মহাবিশ্বের সৌরজগতের অন্যতম গ্রহ একমাত্র পৃথিবীতেই জীবনের অস্তিত্ব আছে। ১ থেকে ১.৫ হাজার কোটি বছর পূর্বে মহাবিশ্বের সকল শক্তি,পদার্থ,মহাকাশ,নক্ষত্র{সূর্য},গ্রহ,উপগ্রহ {চন্দ্র} সবকিছু এই বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।নক্ষত্রগুলো কোটি কোটি আলোকবর্ষ [এক আলোকবর্ষ = ৯.৪×১০^১২ কি. মি (প্রায়)] দূরে বিস্তৃত মহাবিশ্বে গুচ্ছ বা ক্লাস্টার তৈরি করে ।এসব কোটি কোটি নক্ষত্রপুঞ্জের গুচ্ছকে একত্রে ছায়াপথ বলে।এরূপ প্রায় ১০ হাজার কোটি ছায়া পথের একটি হচ্ছে আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ । এ ছায়াপথের প্রায় ১০ হাজার কোটি নক্ষত্রের মধ্যে সূর্য একটি নক্ষত্র।নক্ষত্র সৃষ্টি হয়েছিল ছায়া পথের অতি ঘন গ্যাসীয় ও ধুলি মেঘের মহাকর্ষীয় ভাঙনের ফলে।গ্রহের সৃষ্টি হয়েছে নক্ষত্রকে ঘিরে থাকা অবশিষ্ট গ্যাস ও ধুলিকণার ঘনীভবনের ফলে।ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় ৪৫.৫ হাজার কোটি বছর আগে সোলার নেবুলা থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে।সূর্যকে ঘিরে সৌরজগৎ এ আছে পৃথিবী ছাড়া আরও আটটি গ্রহ ও এদের উপগ্রহ এবং উল্কা, নীহারিকা,ধূমকেতু,কৃষ্ণ গহ্বর ইত্যাদি।

পৃথিবী: সৃষ্টিলগ্নে পৃথিবী পৃষ্ঠ এত গরম ছিল যে টগবগ করে ফুটতো।ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে তাপ সরে গিয়ে ঠান্ডা হতে থাকে এবং ভারী পদার্থ গুলো পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে চলে যায়।হালকা পদার্থ গুলো যেমন :- বালু,পাথর,মাটি ভূত্বক গঠন করে আর বায়বীয় পদার্থ গুলো যেমন – কার্বনডাইঅক্সাইড,জলীয়বাষ্প,মিথেন, কার্বন মনোঅক্সাইড ইত্যাদি বায়ু মন্ডল গঠন করে ।এরপর এরপর পৃথিবী আরো ঠান্ডা হয়ে জলীয়বাষ্প তরলে পরিণত হয়ে সমুদ্র তৈরি করে এবং বায়ু মন্ডল অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।এসব উপাদান তৈরি হওয়াতে জীব টিকে থাকতে পারছে।

ভূত্বক: পৃথিবীর শিলা মণ্ডলের উপরের অংশ পানি ,মাটি,নুড়ি পাথর,বন জঙ্গল , পাহাড় পর্বত , খনিজ পদার্থ ইত্যাদি দ্বারা আবৃত থাকে ভূত্বক ।কঠিন শিলা দীর্ঘদিন ধরে রোদ,বৃষ্টি,ঝড়,ভূমকম্পে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে পরিণত হয় এবং বায়ু,বরফ ও পানির প্রবাহ,অগ্নেয়োগীরির অগ্নুৎপাত ইত্যাদি এর কারণে কোনো স্থানে জমা হয়ে মাটি গঠন করে।এছাড়া পানি,বায়ু,ব্যাকটেরিয়া,পচা ও মৃত জীবের দেহাবশেষ মিলে উর্বর মাটি তৈরি করে।মাটির প্রকৃতি ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন । ভূপৃষ্ঠ হতে খনিজ পদার্থ, জীবাশ্ম জ্বালানি,অজৈব পদার্থ ইত্যাদিও পাওয়া যায় যা মানব কল্যাণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।

জলমণ্ডল: পৃথিবীর পৃষ্টে কোথাও নরম মাটি,পলিমাটি,কোথাও শক্ত পাথর,পাহাড়,বন প্রায় অধিকাংশ জায়গা পানি দ্বারা আবৃত।সকল প্রকার জীবের জন্য পানি একটি অত্যাব্যকীয় উপাদান।মাটির নিচে ১.৬০% এবং বায়ুতে ০.০০১% পানি রয়েছে।ভূপৃষ্ঠের শতকরা ৭১ ভাগ পানি দ্বারা আবৃত।

বায়ুমণ্ডল: অভিকর্ষিয় বলের প্রভাবে যে বায়বীয় অংশটি পৃথিবী পৃষ্ঠকে ঘিরে রেখেছে তাকেই বলে বায়ুমণ্ডল।বায়ু মন্ডল এ মূলত রয়েছে নাইট্রোজনে,অক্সিজেন,এছাড়া জলীয় বাষ্প ,ধূলিকণা, আর্গন, কার্বনডাইঅক্সাইড সহ কিছু গ্যাস।

দৃশ্যমান বিশ্ব পদার্থ ই শক্তির সমন্বয়ে গঠিত।বিশ্বের সর্বত্র পদার্থ ও শক্তির স্বভাব হলো কতগুলো ভৌত নিয়ম মেনে চলা। সৌরজগতের একমাত্র শক্তির উৎস সূর্য।শক্তি অবিনশ্বর ,একশক্তি থেকে আরেক শক্তিতে রূপান্তর হয়।

Related Posts

7 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.