জাদুকর নেই, তবুও গ্রামের নাম “জাদুগাঁও”!

জাদুগাঁও। নামটি শুনলেই অনেকে বলবে যে, একসময় হয়তো এই গ্রামে জাদুর চল ছিল। কিন্তু, মোটেও তা নয়। এই গ্রামের নাম জাদুগাঁও হয়েছে অন্য এক কারণে। এই গ্রামে বাস করতো জাদু নামে এক মুচি। ওই গ্রামে অনেক ধনী লোকও বাস করত। তবুও ধনীদের নামে গ্রামের নাম না হয়ে, এক দিনমজুর মুচি এর নামে গ্রামের নাম কি করে হলো? আজকে আমি সেই গল্প নিয়েই তোমাদের সামনে হাজির হয়েছি।

শহর থেকে বেশী দূরে নয়। এই ১৫-২০ মাইল দূরে অবস্থিত সেই গ্রাম। গ্রামের নাম ছিল কাল্লাকাটা গ্রাম। কারণ, একসময় এই গ্রামে এক ডাকাতের হাতে ১০০ লোকের কাল্লা কাটা গিয়েছিল। সেই থেকে এর নাম হয়ে যায় কাল্লাকাটা গ্রাম।
কিন্তু বর্তমানে সেখানে অনেক ধনী লোক বাস করে। তারা ব্যাবসার খাতিরে অন্যান্য জায়গায় যায়। তারা যখন অন্য জায়গায় ব্যাবসা করতে যায়, তখন তাদের ব্যাবসার কর্মচারী, ক্রেতা, বিক্রেতারা তাদের গ্রামের নাম শুনতে চাইলে, তারা লজ্জায় সেটা বলতে পারতো না।

তাই কিছু ধনী লোক একসাথে বসে সিদ্ধান্ত নিল যে, এই গ্রামের নাম পালটানো হবে। কিন্তু নতুন নাম কি হবে, সেই নিয়ে তারা কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারল না।
পরে তারা ওই গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বীকে ডাকল। আর তাদের ভাবনার কথা বলল। মুরুব্বীরা বলল, এই গ্রামের নাম কোনো মহান ব্যাক্তির নামে করা হোক। এই কথা শুনে, এক ধনী লোক দাঁড়িয়ে বলল, “আমি অনেক ধনী। আমি মানুষকে সাহায্যও করি। তাই আমার নামে গ্রামের নাম করা হোক।”

তার কথা শুনে ওপর ধনী লোক বলল, “আপনি কত মানুষকে সাহায্য করেন, তা সবার জানা আছে! দেন তো বছরের মাথায় ওই কমদামি কিছু শাড়ি আর লুঙ্গি, তাতেই আপনি এতো মহান!”
১ম ধনী লোকটি তখন বলল, “আমি তো তাও কিছু দিই। আর আপনি তো হার কিপ্টে! কখনোই তো কাউকে কিছু দেন না!”
এভাবে সব ধনী লোক নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া লাগিয়ে বসলো।

মুরুব্বীরা অবস্থা বেগতিক দেখে অন্য উপায় বের করলো। তাঁরা বলল, “আগামিকাল এই গ্রামের যে লোকের মাথার ঘাম পায়ে পড়বে, তার নামে এই গ্রামের নাম হবে।”
এই কথা শুনে ধনীরা বলল, এই সিদ্ধান্ত তারা মানবে না। কারণ, সবাই জানে, কৃষকেরা সারাদিন মাঠে কাজ করে, শ্রমিকেরা দিনমজুরি করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। তাই ওই নিচু লোকদের নামে এই গ্রামের নাম হতে পারেনা। বড় লোকদের নামে এই গ্রামের নাম হবে।

মুরুব্বীরা এবার নতুন বুদ্ধি আঁটল। তাঁরা বলল, “তাহলে আগামীকালকে যে লোকের মাথার ঘাম তার হাতের দামী জুতায় পড়বে, তার নামেই এই গ্রামের নাম হবে।”
ধনী লোকেরা বুঝতেই পারল না, মুরুব্বীরা কি বুঝাতে চেয়েছে। হাতেরও আবার জুতা হয় নাকি? আবার যেই সেই জুতা না, দামী জুতা। তারা শুধু ভেবেই গেলো।
পরদিন সকাল থেকে ধনীদের ও মুরুব্বিদের ঠিক করা একজন লোক সারা গ্রামে টহল দিতে লাগলো। কিন্তু দুপুর হয়ে গেলেও কোনো হাতে জুতা পড়া লোক দেখতে পেল না।

দুপুর ২.৫ টায়, ওই লোকটা দেখল, একজন মুচি একটা ধনী লোকের জুতা হাতে নিয়ে পলিশ করতেছে। প্রচণ্ড গরমে লোকটা ঘেমে গেছে। তাই হঠাৎই তার মাথার ঘাম, তার হাতে থাকা দামী জুতার উপর পড়ে গেলো। এই দৃশ্য দেখার সাথে সাথে ওই লোকটা ধনীদের আর মুরুব্বীদের ডাকতে গেলো। তাঁরা এসেও এই ব্যাপারটি দেখতে পেল।
যেহেতু শর্তের সাথে এই দৃশ্যটি মিলে গেছে, তাই ওই মুচির নামেই এই গ্রামের নামকরণ করা হবে।

ধনীরা এই বিষয়টা মানতে রাজি নয়। কিন্তু মুরুব্বীরা ধনীদের কাছ থেকে আগেই ওই শর্তে সই নিয়ে রেখেছে। তাঁরা সেই শর্ত আর ধনীদের সই করা কাগজ দেখিয়ে বলল, “অস্বীকার করার আর কোনো উপায় নেই তোমাদের!”
ধনীরাও বুঝল, অস্বীকার আর করা যাবে না। তাই তারাও এটা মেনে নিল। সবাই তখন ওই মুচির কাছে গিয়ে বলল, “তোমার নাম কি?”
মুচি মুচকি হেসে জবাব দিলো, “আজ্ঞে বাবু, হামাগো নাম জাদু মিয়া।”
সবাই তখন সমস্বরে বলে উঠল, “আমাদের গ্রামের নতুন নাম জাদুগাঁও”।

Related Posts

9 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.