কেন আমাদের অনুতাপ হয়, কেন বারবার পুরোনো কথা মনে পড়ে!

আসসালামু আলাইকুম

বসে আছি, কোন কাজ নেই হাতে, হঠাৎ করে পেছনের দিনের করা কিছু কাজে কথা মনে পড়ছে। যে কাজগুলো আমার করা ঠিক হয়নি, কেউ হয়ত আমার সেসব কাজের জন্যে কষ্ট পেয়েছে, মনে আঘাত পেয়েছে অথবা কারো হয়ত কোন ক্ষতি হয়ে গেছে। এসব ভেবে নিজেকে ছোট লাগছে খুব। মনে হচ্ছে সেই সময়ে ফিরে গিয়ে ভুলগুলো ঠিক করে আসি।

আপনারও কি ঠিক এমন কিছু মনে হয়? পুরোনো দিনে করা ভুলগুলো ভেবে কি আপনারও সেসব দিনে ফিরে গিয়ে সেই ভুলগুলো ঠিক করে আসতে মনে হয়? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্যে। আমরা এই ধরণের চিন্তাগুলোকে “অনুতাপ” বলে থাকি। সাধারণভাবে বলতে গেলে সেসব কাজের জন্য আমাদের অনুতাপ আসে যে কাজগুলো আমরা আমাদের সম্পূর্ণ মনোভাব দিয়ে করিনা। যেগুলোর কিছু অংশ আমরা যে কোন কারণে বাদ রেখে দেই। পরে সেই না করা অংশ মনে পড়ে, আর মনে হয়, হয়ত সেটুকু করলেই বেশি ভাল হত।

আমাদের করে আসা কোন কাজ যেগুলো ভেবে আমাদের অনুতাপ, অনুশোচনা, লজ্জা, অপরাধবোধ কাজ করে, এইসব অনুভূতি অনেক সাধারণত স্বাভাবিক। কিন্ত যদি এই অনুভূতিগুলো আপনাকে অতি মাত্রায় বিরক্ত করে, যদি বিষন্নতা তৈরি করে, যদি আপনার স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত করে, তবে সেটা মানুসিক সমস্যার পর্যায়ে পড়ে।

যদি অতি মাত্রায় এই অনুতাপের মুখে পড়ে থাকেন তাহলে আপনার মানুসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। এই মাত্রাতিরিক্ত অনুতাপ, অনুশোচনা, অপরাধবোধ হতে পারে আপনার “অনিদ্রা”, “বিষন্নতা”, “ক্ষুদামন্দা” এমন কিছু সমস্যার কারণ, যা আপনার স্বাভাবিক জীবনের ধারা ব্যাহত করতে পারে, এমনকি আপনি শারীরিকভাবেও অসুস্থ্ হয়ে পড়তে পারেন।

সাধারণভাবে নিচের কাজগুলো করে দেখতে পারেন, আশা করি উপকার পাওয়া যাবে ইন’শা আল্লাহ।

১ ক্ষমা চাওয়াঃ প্রথমত যদি মনে যে আপনার কাজে কেউ কষ্ট পেয়েছে বা কারো ক্ষতি হয়েছে, তবে সম্ভব হলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে পারেন। ক্ষমা করা বা ক্ষমা চাওয়া দুটোই আমাদের মানুসিক প্রশান্তি দিয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত ক্ষমা চাইবার দরকার নেই। কারণ অনেক সময় বারবার ক্ষমা চাওয়া বা ক্ষমা না পেলে আরো বেশি অনুতাপ হতে পারে, ভুগতে পারেন নিরাপত্তাহীনতায়।

২ শিক্ষা নেয়াঃ যে কাজে আপনার অনুতাপ হচ্ছে সে কাজটি থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যাতে পরবর্তীতে আবারো অনুতাপের সৃষ্টি না হয়। সেক্ষেত্রে একই কাজ ভালভাবে করতে পারলে আগের অনুতাপ কমে বা শেষ হয়ে যায়। কাজ করার আগে কিছুটা ভেবে কাজ করার অভ্যাস করতে পারেন। এতে অনেক ক্ষেত্রেই অনুতাপের হাত থেকে মুক্তি মেলে।

৩ অন্যভাবে ভাবাঃ অনেক সময় আমরা ভাবি যে আমাদের কাজটা ঠিক হয়নি করা। ভেবেই কষ্টে পড়ে যাই, কিন্ত আদোতে আমাদের কাজটা ঠিকই ছিল। কাজেই আমরা যদি একটু অন্যভাবে ভাবি, তাহলেই আমারা হয়ত বুঝতে পারব যে আমাদের করা কাজটি নিয়ে আসলেই অনুতাপের কিছু নেই, যা হয়েছে ভালোর জন্যেই হয়েছে।

৪ পরবর্তী ধাপ ঠিক করাঃ অনেক সময় যেটা করা হয়ে যায়, তা আর ঠিক করা যায়না, কিন্ত তার পরের ধাপগুলো ঠিক করার সুযোগ থাকে। যেমন অনেক সময় একটা পরীক্ষা খারাপ হলেও সামনের পরীক্ষা দিয়ে সেটা পুষিয়ে নেয়া যায়। এমন ক্ষেত্রে কাজের পরের ধাপগুলো আরো ভালভাবে করলে অনুশোচনা কমে। কথায় বলে, “শেষ ভাল যার, সব ভাল তার”।

৫ শেয়ার করাঃ “শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং” হরহামেশাই আমরা এই কথাটি শুনে থাকি। আপনার খারাপ লাগার কথা বিশ্বস্ত কাউকে বলতে পারেন। মন খুলে কথা বললে খারাপ লাগা কমে। তবে এ ব্যাপারে ব্যক্তি নির্বাচনে খুব সতর্ক হতে হবে।

৬ আপনার খারাপ জিনিসের পাশাপাশি আপনার ভাল কাজের কথাও ভাবুন। আপনি শুধু খারাপ করেন না। আপনি ভাল মানুষ, এটা বিশ্বাস করতে শুরু করুন।

৭ পরিবার বন্ধু, যারা আপনাকে ভালবাসে তাদের সাথে সময় কাটান, ভালো লাগবে।

৮ অতীত কে রেখে বর্তমানে জীবনযাপন করুন। অতীত তো অতীতই। আর মানুষের খারাপ কথা এড়িয়ে চলতে শিখুন।

কথাগুলো আপনাদের কিছু উপকারে এলেই সেটা এই লেখার সার্থকতা। শরীরের স্বাস্থ্যের পাশপাশি মানুসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও গুরুত্ব দিন। সবাই ভালো থাকুন, ধন্যবাদ।

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।

Related Posts

8 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.