আমি একজন রিকশাচালক এবং ‘রিকশাওয়ালা’ নামেই বিশ্বের সর্বত্র পরিচিত।এটা হলো সেই নাম যা বলে লোকে আমায় ডাকে।কখনো কখনো যাত্রিরা আমার নাম আরো ছোট করে এবং বলে ‘হেলো রিকশা’,যেনো আমি ই সেই যানবাহন যেটা আমি চালাই।কিন্তু আমি জানি তারা৷ ওইভাবে৷ ডাকে কারণ তারা খুব তাড়ায় থাকে এবং দ্রুত তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে চায়।আমি চাইলেও এসব ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মান অভিমান করে বসে থাকতে পারি না।আমি গরিব কিন্তু দুঃখী নই।আমি দারিদ্রতা সহ্য করে বেঁচে থাকি কিন্তু তাতে কোনো দুঃখ নেই।আমি সৎ পথে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রিকশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে সেই অল্প অর্থ দ্বারা কষ্ট করে নিজের সংসার চালাই কিন্তু কখনো কোনো দুর্নীতি করি না।এবং এর ফলে আমার নিজেকে নিয়ে গর্বও হয়।আমি নিজের উপর গর্বিত যে আমি কোনো অন্যায় করি না এবং আমি রিকশাচালক কিন্তু কোনো চোর নই।আমি তিন-চাকার একটা যানবাহন চালাই যাকে সকলে ‘রিকশা’ বলে।আমার নিজের কোনো রিকশা থাকে না কিন্তু খুব ইচ্ছে যদি আমার নিজের একটা রিকশা থাকতো এবং স্বপ্নও দেখি হয়তো ভবিষ্যতে নিজের একটা রিকশা হবে।সে যাইহোক আমি আমার রিকশাটাকে খুব ভালবাসি এবং আমি আমি রিকশাটার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ কারণ এটা চালিয়ে আমি যা সামান্য অর্থ পাই তা দিয়ে আমি আমার সংসার চালাই। আমার পরিবারের ভরণ পোষণ করি,আমার স্ত্রী সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দেই।আমি একজন পিতার মত আমার রিকশার খেয়াল রাখি সব সময় এবং সব সময় সাবধানতার সাথে৷ রিকশা চালাই। আমি আমার রিকশা সব সময় পরিস্কার -পরিচ্ছন্ন রাখি এবং সূর্যের প্রখর রোদ এবং বৃষ্টি থেকেও নিরাপদে রাখি।
চলো এবার আমি তোমাদের আমার নিত্যদিনের কিছু কথা বলি।হয়তো তোমাদের ভালো লাগবে।আমি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি তারপর হাতমুখ ধুয়ে কিছু সস্তা কিন্তু হালাল খাবার খাই সকালের নাস্তায়,তারপর আমি আমার তিনচাকার রিকশা নিয়ে বাইরে বের হই জীবিকার খুজে।কখনো কখনো যাত্রী ছাড়াই অনেকটা পথ রিকশা চালিয়ে যেতে হয় যাত্রীর খোজে। দিন যত বাড়ে, সূর্যের প্রখরতা যত বাড়ে আমার দুর্দশা তত বাড়ে।কোনো ভারী যন্ত্রের সহায়তা ছাড়া শুধুমাত্র দুটো পা দিয়ে ভার বয়ে পায়ে পেডেল করে নিয়ে যাওয়াটা সত্তি অনেক কষ্টকর।কিন্তু আমার আর কিছু ই করার নেই।আমি যে গরিব।আমার যে নিজের একটা রিকশাই নেই সেখানে শক্তিশালী কোনো যন্ত্র কোথায় পাবী আমি।আবার কখনো কখনো কোনো উপার্জন ছাড়াই মাইলের পর মাইল রিকশা চালিয়ে যেতে হয়।সেটা৷ আরো বেশি কষ্টকর। কিন্তু তবুও আমার যা উপার্জন হয় তাই অনেক।শত কষ্ট সহ্য করার পর কখনো কখনো আমি আমার পরিবারকে একটু ভালো কিছু খাবার দিতে পারি। যখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয় তখন খুব ই কষ্টে দিন কাটাতে হয় আমাদের।কখনো কোনো খাবার ই তুলে দিতে পারি না আমি আমার পরিবারের মুখে।সাধারণত আমি সকাল থেকে সন্ধে অবধি রিকশা চালাই।কখনো কখনো দুপুরের খাবার খাই৷ আবার কখনো না খেয়ে ই সারাদিন কাটাতে হয়।সাধারণভাবে লম্বা ভ্রমণ শেষে আমি কিছুটা সময় বিশ্রাম নেই আমার ক্লান্তি দুর করার জন্য।আমার একটা বাড়ি আছে – খুব ই ছোট কিন্তু ভালবাসায় পরিপূর্ণ একটা ঘর যেখানে আমি আমার আদরের স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে বাস করি।যখন আমি সকালে রিকশা নিয়ে বের৷ হই তখন তারা দরজায় দাড়িয়ে আমার চলে যাওয়া দেখে এবং সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরি তারা আমার জন্য রাস্তার ধারে অপেক্ষা করে।তারা যখনই আমার রিকশার ঘন্টার আওয়াজ শুনতে পায় তখনই ছোট ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটে চলে আসে আমার কাছে।যখন আমি তাদের নিয়ে ঘরে যাই তখন আমার প্রিয় স্ত্রী মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে স্বাগত জানায় এবং তারপর ছোট হাতপাখা নিয়ে আমার পাশে বসে আমাকে বাতাস করতে থাকে।অল্পকিছুক্ষণ পর আমরা আমাদের খাবার খাই এবং খুব তারাতারি ই সবাই মিলে শুয়ে পড়ি বিছানায়। কিন্তু সবিশেষে একটা ভয় সর্বদা ই কাজ করে আমার মনে যা আমার সব সুখকে মাটি করে দেয়।আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।আমি এখন যুবক এবং এখন আমার দেহে বল আছে এবং অনেক্ষন না খেয়ে কাজ করে যাওয়ার৷ ক্ষমতাও আছে আমার কিন্তু যখন আমি বৃদ্ধ হয়ে যাবো তখন আমার আর আমার পরিবারের কি হবে? আমার সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব কে নেবে যদি আমি অসুস্থ হয়ে যাই কিংবা মরে যাই?এই সমস্যাগুলোর কথা সর্বদাই আমার মন জুড়ে থাকে।কিন্তু এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর খুজে পাই না আমি।আমি সব সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রর্থনা করি এবং তার উপর ভরসা করি যে তিনি আমাদের রক্ষা করবেন।
যে রিকশায় চড়ে সবাই ঘুরতে যায় এবং পরস্পরকে নিয়ে নানান স্বপ্ন দেখেন আমি৷ দিনরাত পরিশ্রম করে সেই রিকশা চালাই আমার পরিবারের মুখে একটু অন্ন তুলে দেয়ার জন্য। যখন লোকে আমার৷ রিকশায় চড়ে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরতে যায় তখন তাদের দেখে আমারও ইচ্ছে হয় আমার পরিবারকে নিয়ে৷ ঘুরতে যাওয়ার কিন্তু পারি না কারণ ঘুরে সময় না কাটিয়ে রিকশা চালালে আমি কিছু টাকা রোজগার করতে পারবো যা দিয়ে আমি আমি আমার সন্তানদের একটু ভালো খাবার খাওয়াতে পারবো। যখন আমি দেখি মানুষ নতুন নতুন জামা পরে ঘুরে বেড়ায় তখন আমার চোখের সামনে আমার স্ত্রী সন্তানদের মুখ ভেসে উঠে যারা ছেড়া, ময়লা, পুরনো কাপড় পরে থাকে সব সময়।একটু ভালো পোশাকও দিতে পারি না আমি তাদের।কত ই হতভাগ্য তারা।
কখনো কখনো আমি রিকশা চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হই তখন আমি খুব ই সমস্যার মধ্যে দিয়ে জীবন কাটাই।যদি আমি আহত হই বা আমার রিকশার ক্ষতি হয় তখন খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয় আমার পরিবারকে।
এই হলো আমার জীবন। একজন গরিব রিকশাওয়ালার জীবন।
9 Comments
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
Try to give something epic
Hmmm
Gd
Heart touching
Good post
Nice
❤️
Oooo
gd