আমিও ঐ স্কুলেরই ছাত্র! রম্যগল্প!! হাসির গল্প!!! 

একবার আকস্মিকভাবে এক স্কুল পরিদর্শনে গেছেন বিদ্যালয় পরিদর্শক। তিনি এক ক্লাসে ঢুকে শ্রেণি শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলেন— “এখন কোন বিষয় পড়ানো হচ্ছে?” শ্রেণি শিক্ষক বললেন— “স্যার, ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে।” তখন বিদ্যালয় পরিদর্শক এক ছাত্রকে উঠে দাঁড়াতে বললেন। সেই ছাত্র উঠে দাঁড়ালে বিদ্যালয় পরিদর্শক তাকে জিজ্ঞেস করলেন— “আচ্ছা, বলো তো সোমনাথের মন্দির কে ভেঙ্গেছে?”

ছাত্রটি মাথা চুলকাতে-চুলকাতে বললো— “স্যার, আমি ভাঙ্গি নাই।” ছাত্রের উত্তর শুনে বিদ্যালয় পরিদর্শকের আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেলো। বলে কি এই ছেলে? তিনি ছাত্রাবস্থায় ইতিহাস বইয়ে নিজে পড়েছেন— মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ভারতের গুজরাটের সোমনাথের মন্দির ভেঙ্গেছিলেন। আর এখন এই গাধা ছেলে বলছে, সে নাকি সোমনাথের মন্দির ভাঙ্গে নাই।

তিনি ক্লাসের আরও কয়েকটি ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, “সোমনাথের মন্দির কে ভেঙ্গেছে?” তারা সবাই বললো— ”তারা কেউ সোমনাথের মন্দির ভাঙ্গে নাই।” বিদ্যালয় পরিদর্শক পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলেন— “এই ক্লাসের ফার্স্টবয় কে?” ক্লাসের ফার্স্টবয় উঠে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত গর্বিত ভঙ্গিতে জানালো, “আমিই স্যার এই ক্লাসের ফার্স্টবয়।” একটু ভরসা পেয়ে তখন তাকে বিদ্যালয় পরিদর্শক জিজ্ঞেস করলেন— “আচ্ছা, তুমিই ঠিক করে বলো তো— আসলে সোমনাথের মন্দির কে ভেঙ্গেছে?”

ফার্স্টবয় মাথায় হাত রেখে আল্লাহর নামে, নবীর নামে এবং বই ছুঁয়ে কিরে-কসম কেটে, হলফ করে বললো— “আমি ভাঙ্গি নাই স্যার। আর আমি বিদ্যার কসম কেটে বলছি, এই ক্লাসের কেউ ভাঙ্গে নাই। কেননা, আমি এই ক্লাসের ক্যাপ্টেন। যদি কেউ মন্দির ভাঙ্গতো, তাহলে আমি অবশ্যই জানতাম।”

বিদ্যালয় পরিদর্শক আশ্চর্য হয়ে ঐ ক্লাসের শিক্ষককে বললেন— “কী বলছে এই ছেলে?” ক্লাসের শিক্ষক অত্যন্ত নিরীহভঙ্গিতে বিনীতভাবে জানালেন— “জ্বি স্যার, এই ছেলে ঠিকই বলছে। এ আমাদের ক্লাস ক্যাপ্টেন, ফার্স্ট বয়। সে কখনো মিথ্যা কথা বলে না। আর আমাদের এই ক্লাসের ছাত্ররা খুব ভদ্র, শান্ত ও নিরীহ। তারা যে কেউ সোমনাথের মন্দির ভাঙ্গে নাই, এ ব্যাপারে আমিও সুনিশ্চিত।”

তবে তিনি এও জানাতে ভুললেন না যে, ক্লাস টেনে কিছু বেয়াদব ছেলে আছে, তাদের কেউ ভেঙ্গেছে কিনা এটা তিনি বলতে পারছেন না। এটা হেড স্যার ভালো বলতে পারবেন। অবশ্য যদি কেউ হেড স্যারের কাছে মন্দির ভাঙ্গা নিয়ে কমপ্লেইন করে থাকে, তাহলে সে খবর শুধু হেড স্যারের কাছেই থাকবে।

রেগেমেগে বিদ্যালয় পরিদর্শক তখনই হন্তদন্ত হয়ে হেড স্যারের রুমের দিকে রওনা দিলেন। হেড স্যারও বিদ্যালয় পরিদর্শকের আকস্মিক আগমনের কথা জানতে পেরে সেদিকেই আসছিলেন। স্কুলের বারান্দায় তাদের দেখা হয়ে গেলো। বিদ্যালয় পরিদর্শককে সালাম দিয়ে হেড স্যার জিজ্ঞেস করলেন— স্যার, কোনো সমস্যা?

বিদ্যালয় পরিদর্শক কঠিন স্বরে হেড স্যারকে জিজ্ঞেস করলেন—” আচ্ছা, আপনার স্কুলের ছাত্ররা বলছে, ওরা কেউ সোমনাথের মন্দির ভাঙ্গে নাই।” হেড স্যার অমায়িক হেসে বললেন— “স্যার, ওরা ঠিকই বলেছে। আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট কনফার্ম, ওরা কেউই ভাঙ্গে নাই। শুধু ওরা কেন, আমার স্কুলের কোন ছাত্রই ভাঙ্গে নাই। এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।”

হেড স্যারের কথা শুনে বিদ্যালয় পরিদর্শকের মেজাজ এমন খারাপ হলো যে, তিনি ঐ স্কুলেরই সাবেক ছাত্র; বর্তমানে ঐ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও এলাকার এমপি সাহেবের কাছে গিয়ে বিচার দিলেন এ নিয়ে।

সব শুনে এমপি সাহেব বললেন— আপনি নিশ্চিত থাকেন, ওরা কেউ ভাঙ্গে নাই। আমি ঐ স্কুলেরই একসময় ছাত্র ছিলাম। আমাদের স্কুলের ছাত্ররা খুব ভালো। আমার ধারণা, ওরা কেউ ভাঙ্গে নাই। আর যদি কেউ ভেঙ্গেও থাকে; তাহলেও এ নিয়ে আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। ভাঙ্গা মন্দির ঠিক করার জন্য অবশ্যই আমি টাকা দেব। হাজার হোক আমিও ঐ স্কুলেরই ছাত্র!

সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।

Related Posts

10 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.