মুরাদ পাগলা এখন রাজার মন্ত্রী!

এক গ্রামে ছিল এক একটা পাগলা। নাম ছিল মুরাদ। সবাই তাকে মুরাদ পাগলা বলে ডাকত। যদিও সে পাগল, কিন্তু তার সামনে কোনো অন্যায় দেখলে সে ঝাঁপিয়ে পড়তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে। সে তার আশেপাশের সবাইকে সাহায্য করার চেষ্টা করত। কিন্তু সবাই তাকে পাগল বলে ক্ষ্যাপায়।

একবার গ্রামে এক রাজার আক্রমণ ঘটে। ওই রাজা সবাইকে বলে দেন যে, এই রাজ্যের নতুন রাজা হলেন তিনি। আগের রাজাকে তিনি কারাবন্দি করে রেখেছেন। আগের রাজার মন্ত্রী, আগের রাজার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাই আগের রাজা তার কাছে পরাজিত হয়েছেন। তাই তিনি তাকে বন্দি করে রেখেছেন। তিনি আগের রাজার দিগুন খাজনা প্রজাদের উপর চাপিয়ে দেন। আর বলেন, যারা এই খাজনা দিতে পারবে না, তাদেরকে তিনি শুলে চড়াবেন। আগের রাজা খুব ভালো ছিলেন। তিনি প্রজাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতেন। তাই প্রজাদের প্রায় খুব কম খাজনা দিতে হতো। কাউকে কাউকে তিনি খাজনা মাফ করে দেন। ফলে প্রজারা তাকে বড্ড ভালোবাসত।

অন্যদিকে নতুন রাজা খুব বদমাইশ। তিনি খাজনা দিগুন করে দিলেন। দিগুন খাজনা দিতে না পারলে, তাদের তো গর্দান চলে যাবে। কিন্তু দিগুন খাজনা তারা দেবে কি করে? তারা তো নিজেরায় ভালোমতো খেতে পারে না। আগের রাজার সময় তারা খাজনা নিয়ে কোনো চিন্তায় করতো না। খাজনা ঠিক সময়ে সকলে পৌঁছে দিত। কারণ, সে খাজনার পরিমাণ সামান্য। আর এই রাজার খাজনার পরিমাণ দ্বিগুণ।

পাগলা মুরাদ এই অন্যায় মেনে নিতে পারলো না। সে তার বুদ্ধি বের করতে চাইলো। কিন্তু, সে যে পাগলা, তার বুদ্ধি কই থেকে বের হবে? তবে সে পাগলা হলেও নদীর ধারে বসে বাতাস খেলে তার বুদ্ধি বারে। তাই সে নদীর ধারে গেলো। সেখানে বসে বসে প্রকৃতির নির্মল বাতাস মুখ দিয়ে হা করে খাচ্ছিল। পাগলাদের মতো আর কি!

এভাবে বাতাস খেতে খেতে তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। দারুণ একটা বুদ্ধি। সে তাড়াতাড়ি করে রাজমহলের দিকে চলতে লাগলো। পথে সে জাম্বু চাবিওয়ালার দেখা পেলো। সে তাকে সব খুলে বলল।

জাম্বু চাবিওয়ালা বলল, “আমি তোকে এই জাদুর চাবিটা দিচ্ছি, এটা দিয়ে সব তালা খুলে যাবে। এটা আমি তোর জন্য দিচ্ছি না। রাজাকে উদ্ধার করতে পারলে আমাদের সবারই লাভ। তাই তোকে এটা দিলাম। মনে রাখবি, এই চাবির কথা কাউকে বলতে পারবি না।”
মুরাদ পাগলা সেটা নিয়ে চলে যায়। এবার সে ধারুম কামারের বাড়িতে যায়। কামারকে সব বলতে সে একটা জাদুর চাকু দেয়। এই চাকু কোনো রাজার হাতেই জিবন্ত হয়। আর রাজা যার দিকে এই চাকু দেখাবে সে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তবে এটা মাত্র একবারই ব্যাবহার করা যাবে। মুরাদ পাগলা সেটা নিয়েও সামনে এগুতে থাকে।

রাজমহলের কাছে এসে সে পাগলামি আরম্ভ করে দেয়। রাজা এ কে তা জানতে চাইলো। মন্ত্রী তো একে চিনে। সে বলল, এটা হচ্ছে মুরাদ পাগলা। রাজা এটা শুনে তো মহাখুশি। তিনি আগেই চেয়েছিলেন যে, আগের রাজা খুব কষ্ট সহ্য করে মরুক।

অত্যাচারে ওই রাজা যেন নিজেই আত্মহত্যা করেন। তাই তিনি এই পাগলকে ওই একই কারাগারে, যে কারাগারে আগের রাজা আছেন, সেই কারাগারে এই পাগলকে পাঠানোর কথা ভাবলেন। “এই পাগলের পাগলামি সহ্য করতে না পেরে আগের রাজা নিজেই নিজের প্রাণ নিয়ে নেবেন। আহা! কি মনোহর দৃশ্য হবে সেটা!” এটা ভেবে তিনি অনেক মজা পেলেন।

রাজার আদেশ অনুযায়ী মুরাদ পাগলাকে ওই একই কারাগারে রাখা হলো। মুরাদ পাগলা এবার তার কাজ শুরু করে দিলো। সে জাদু চাবি দিয়ে কারাগারের তালা খুলে ফেলল, আর আগের রাজাকে যাদুর চাকুটি দিয়ে দিলো। সে রাজাকে তার বুদ্ধির কথা বলল। শুনে রাজা খুব খুশি হলেন।

এরপর তারা কারাগার থেকে বের হয়ে একে একে প্রহরীদের মারতে লাগলেন। রাজার কানে এই খবরটা চলে গেলো। রাজা তখন নিজেই তার বাহিনী নিয়ে এই কারাগারে লড়াই করতে আসলেন। যেই কারাগারে প্রবেশ করছেন, আগের রাজা হাতে থাকা চাকুটি নতুন রাজার দিকে ধরলেন।

নতুন রাজা মরল। মন্ত্রীকে কারাবন্দী করা হলো। আর আগের রাজা আবার রাজ্যের রাজা হলেন।

মুরাদ পাগলার চিকিৎসা করিয়ে তাকে সুস্থ করা হলো। মুরাদ পাগলাকে রাজা তার মন্ত্রীর পদ দিলেন।

Related Posts

17 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.