তার বা ক্যাবল এর মাধ্যম কি এবং এর প্রকার গুলো কি কি?

আসসালামুয়ালাইকুম।

আশাকরি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো- তার বা ক্যাবল এর মাধ্যম যাকে গাইডেড মিডিয়া ও বলা হয়ে থাকে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

তার বা ক্যাবল এর মাধ্যম-

গাইডেড মিডিয়া কোন সলিড ধাতব মাধ্যম দিয়ে  নির্দেশিত কোনো পথে বৈদ্যুতিক সংকেত বা আলোক সংকেত প্রবাহিত হয়। সলিড বা কঠিন মাধ্যমে যেমন- কপার, অ্যালুমিনিয়াম, অপটিক্যাল ফাইবার তার বা ক্যাবল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তার বা ক্যাবলকে গাইডেড মিডিয়া বলার কারণ হলো এই সকল মাধ্যমে কেবলমাত্র নির্দেশিত কোন পথেই বৈদ্যুতিক সংকেত বা আলোক সংকেত প্রবাহিত হতে পারে। ডেটা কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে তার বা কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তার বা ক্যাবল বিভিন্ন ধরনের হয় এ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১. কো এক্সিয়াল ক্যাবল-

দুটি বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ও অপরিবাহী অন্তরক পদার্থের সাহায্যে এ তার তৈরি করা হয়। ভিতরের  পরিবাহী তার কে আচ্ছাদিত করার জন্য ও বাহিরের পরিবাহী তার থেকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝখানে অপরিবাহী বা অন্তরক পদার্থ থাকে। বাইরের পরিবাহী তার কে প্লাস্টিকের জ্যাকেট দ্বারা ঢেকে রাখা হয়। ভেতরের পরিবাহী তার টি সোজা রাখা হয় এবং বাহিরের পরিবাহী তার টি চারদিক থেকে পেঁচানো থাকে। পরিবাহী তার তৈরি করতে সাধারণত কপার ব্যবহার করা হয়।

এ ধরনের ক্যাবল এর ডাটা ট্রান্সফার রেট তারের দৈর্ঘ্য ও ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সির উপর নির্ভর করে। সাধারণত কো এক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করে ১ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে ডিজিটাল ডেটা প্রেরণ করা যায়, এক্ষেত্রে ডেটা ট্রান্সফার রেট ১০এমবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে এবং ট্রান্সমশন অপেক্ষাকৃত কম হয়। দুটি প্রযুক্তি কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের সাহায্যে তৈরি করা হয়-

থিননেটঃ

এটি চিপারনেট। এটি থিন ইথারনেট বা থিনওয়্যার নামেও পরিচিত। তবে এটি ১০বেস২ ইথারনেট নামেই বেশি পরিচিত। ১০বেস২ বলতে বুঝায় যে এই প্রযুক্তিতে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দূরত্বে প্রতি সেকেন্ডে ১০ মেগাবাইট ডেটা আদান-প্রদান করা যায়। এ ধরনের ক্যাবল নন ফ্লেক্সিবল, ভারী ও মোটা হয়ে থাকে।

থিকনেটঃ

এটি থিক ইথারনেট নামেও পরিচিত। তবে এটি ১০বেস৫ ইথারনেট নামেই বেশি পরিচিত। কারণ এই প্রযুক্তিতে সর্বোচ্চ ৫০০ মিটার দূরত্বে প্রতি সেকেন্ডে ১০ মেগাবাইট ডেটা আদান-প্রদান করা যায়। এধরনের ক্যাবল হালকা, ফ্লেক্সিবল ও নমনীয় হয়ে থাকে।

কো এক্সিয়াল ক্যাবল এর নেটওয়ার্ক কানেক্টর-

বিএনসি কানেক্টর এর সাহায্যে এই নেটওয়ার্কে সংযোগ প্রদান করা হয়।

কো এক্সিয়াল ক্যাবল এর ব্যবহার- 

টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, ডিশ টিভি বা ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক, সিসি টিভি নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইত্যাদিতে বহুল ব্যবহৃত হয়।

কো এক্সিয়াল ক্যাবল এর সুবিধাগুলো-  

  • অ্যানালগ ও ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ ক্যাবল ব্যবহার হয়।
  • এটি ফাইবার ক্যাবল অপেক্ষা কম ব্যয়বহুল এবং সহজে বহনযোগ্য।
  • এর বাহিরের দিকে বিদ্যুৎ কুপরিবাহী আবরণ এর কারণে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল অপেক্ষা এ ক্যাবলের মাধ্যমে অধিক দূরত্বে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ডেটা প্রেরন করা যায়।

 কো-এক্সিয়াল ক্যাবল এর অসুবিধাগুলো- 

  • কো এক্সিয়াল ক্যাবল টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল অপেক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল।
  • এই ক্যাবলের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ডিভাইস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা অনেক কঠিন।

২. টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল- 

দুটি পরিবাহী তারকে পরস্পর সুষমভাবে পেচিয়ে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল তৈরি করা হয়। পেঁচানো তার দুটিকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝে অপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ক্যাবলে সাধারণত মোট ৪ জোড়া তার ব্যবহৃত হয়। প্রতিজোড়া তারের মধ্যে একটি সাধারণ রঙের তার থাকে এবং বাকি তারগুলো ভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। তার গুলো সংযোজনের সময় ১ থেকে ৮ নম্বরের ভিত্তিতে সংযোগ দিতে হয়। এই তারের সাহায্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য সাধারণত আরজে৪৫ কানেক্টর ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করে ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে কোন ডেটা প্রেরণ করা যায় না। এছাড়াও ডেটা ট্রান্সফারের দূরত্ব বাড়তে থাকলে ডেটা ট্রান্সফারের রেট কমতে থাকে।

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-

১. আনশিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল বা ইউটিপি।

২. শিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল বা এসটিপি।

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল এর সুবিধাগুলো- 

  • এনালগ ও ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এই ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
  • কম দূরত্বে ডেটা প্রেরণের জন্য এটি সর্বাপেক্ষা কম ব্যয়বহুল পদ্ধতি।
  • টেলিফোন সিস্টেমে ব্যবহৃত টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল এর মধ্যে দিয়ে সিগন্যাল কোন রকম পরিবর্তন ছাড়াই বেশ কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
  • সহজেই স্থাপন করা যায়।

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল এর অসুবিধা গুলো-

  • নয়েজ সিগন্যাল দ্বারা সহজে প্রভাবিত হওয়ার কারণে যোগাযোগ দূরত্ব বেশি হলে ভুলের মাত্রা বেড়ে যায়।
  • গঠন পাতলা হওয়ার কারণে সহজেই ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ট্রাস্সমিশন লস অপেক্ষাকৃত বেশি।

৩. ফাইবার অপটিক ক্যাবল-

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল হলো এক ধরনের আলো পরিবাহী তার যা এক বা একাধিক অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি অপটিক্যাল ফাইবার বৈদ্যুতিক অন্তরক বা ডাই ইলেকট্রিক পদার্থ দিয়ে তৈরি এক ধরনের আঁশ বা ফাইবার যা আলো নিবন্ধকরণ ও পরিবহনে সক্ষম। ফাইবার দেখতে মানুষ চুলের চেয়েও সরু হয়ে থাকে। কেল্লার বিদ্যুৎ অপরিবাহী হলেও আলো পরিবহনে অত্যন্ত দক্ষ।

ফাইবার তৈরীর জন্য বৈদ্যুতিক অন্তরক পদার্থ হিসাবে সিলিকা এবং মাল্টি কম্পনেন্ট কাঁচ বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। ভিন্ন প্রতিসরাঙ্কের এই ধরনের বৈদ্যুতিক অন্তরক বা ডাই ইলেকট্রিক পদার্থ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার গঠিত।

ফাইবার অপটিক এর তিনটি অংশ থাকে- 

১. কোরঃ ভিতরের ডাই ইলেকট্রিক কোর যার ব্যাস ৮ থেকে ১০০ মাইক্রোন হয়ে থাকে।

২. ক্ল্যাডিংঃ কোরকে আবদ্ধ করে থাকা বাইরের ডাই ইলেকট্রিক আবরণ ক্ল্যাডিং নামে পরিচিত। কোরের প্রতিসরাঙ্ক ক্ল্যাডিং এর প্রতিসরাঙ্ক এর চেয়ে বেশি থাকে।

৩. জ্যাকেটঃ আবরণ হিসেবে কাজ করে। যেকোনো ধরনের চাপ ও তাপ থেকে কোরকে রক্ষা করে।

অপটিক্যাল ফাইবার এর সুবিধাগুলো-

বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহনের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ডেটা কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে এই ক্যাবল ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন সুবিধা পরিলক্ষিত হয়। এসব সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • আলোর গতিতে ডেটা স্থানান্তরিত হয় ও  অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতি সম্পন্ন।
  • উচ্চ ব্যান্ড উইথ।
  • আকারে ছোট ও ওজন অত্যন্ত কম।
  • শক্তি কম ক্ষয় করে।
  • বিদ্যুৎ চুম্বক প্রভাব বা ইএম আই হতে মুক্ত। কারণ অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না বিধায় চৌম্বক ক্ষেত্র কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
  • ডেটা সংরক্ষণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা।
  • সঠিক ডেটা চলাচল এর ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থা কোন বাধা প্রদান করতে পারে না।

অপটিক্যাল ফাইবারের অসুবিধা গুলো- 

অপটিক্যাল ফাইবারের উল্লেখযোগ্য অসুবিধাসমূহ হল-

  • ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল ইউ আকারে বাঁকানো যায় না তাই যেখানে অধিক বাঁকানোর প্রয়োজন হয় না সেখানে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ব্যবহার করা সম্ভব।
  • এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
  • অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনবল দরকার হয়।

তো এই ছিল তার বা ক্যাবল সম্পর্কে কিছু তথ্য। আজ এই পর্যন্তই। ইনশাআল্লাহ কথা হবে পরের পোস্টে।

ততদিন পর্যন্ত আশা করি সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।

আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

24 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.