চালাক শিয়াল ও বোকা সিংহ

এক বনে ছিল এক শিয়াল। সে ছিল খুব চালাক। সে পরিশ্রম করে কখনোই খাবার খেত না। সে পরিশ্রম করত না বলে, সে কোনো শিকারও করতে পারতো না। কিন্তু, তার খুব বুদ্ধি ছিল। সে তার বুদ্ধির জোরে বনের রাজা সিংহের কাছ থেকে শিকারের ভাগ ছুটাতো। কারণ, সিংহ তার মতো এতো চালাক ছিল না। ফলে শিয়াল তার বুদ্ধি দিয়ে ওই সিংহের শিকার থেকে ভাগ ছুটাত।

সে ছিল রাজার মন্ত্রী। অর্থাৎ, বনের রাজা সিংহের মন্ত্রী। ফলে বনে তার একটা বড় দাপট ছিল। সে যেদিক দিয়ে যেত, সে দিকে বনের সবাই তাকে সেলাম করত। তার কোনো কাজ ছিল না। সে শুধু বনের রাজাকে খোঁজ এনে দিত, কোন প্রাণী, কোথায়, কীভাবে আছে। কোনো প্রাণীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে কৌশলে সিংহের দরবারে হাজির করানো ছিল ওই শিয়ালের প্রধান দায়িত্ব। সিংহ যখন কোনো শিকার করতো, তখন ওই শিয়াল কৌশলে তার ভাগ ছুটাত। এরকমই একদিনের ঘটনা হচ্ছে,

একবার সিংহ একটা হরিণের শিকার করার জন্য শিয়ালকে দায়িত্ব দেয়। শিয়াল তো চালাক। সে নিজের গতর নড়াবে না। তাই সে সিংহকে বলে, “রাজা মশাই! আপনি হলেন এই বনের রাজা। আপনি শিকার না করে যদি আমি শিকার করি, তবে বনের অন্যান্য প্রাণীরা মনে করবে, আপনি হয়তো শিকার করতে পারেন না। আপনার কোনো ক্ষমতাই নেই। ফলে আপনাকে কেউই আর রাজা মানবে না।”

সিংহ এটা শুনে বলল, “সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু আমার আজকে কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না। তাই তোমাকেই কিছু একটা করতে হবে।” এই কথা শুনে চালাক শিয়াল বুঝল, এই সিংহ নাছোড়বান্দা। একে অন্য কায়দায় শিকার করাতে হবে। শিয়াল বুদ্ধি খাটিয়ে সিংহকে বলল, “রাজা মশাই ঠিক আছে। আমি আপনাকে এখানে একটা পশু এনে দেব। আপনি তার মজা করে শিকার করিয়েন। তবে আপনাকে ওই যে ঝোপ দেখছেন, সেখানে লুকিয়ে থাকতে হবে। আমি যেই কোনো প্রাণী নিয়ে আসব, আপনি তার উপর হামলা করবেন।”

সিংহ এবার একটা বুদ্ধি খাটালো। সে বলল, “তুই যদি শিকার না করিস, তবে আমাকেই তো শিকার করতে হবে। কিন্তু, আমি যেহেতু শিকার করব, তাই আমি আগে খেয়ে নিব। তারপর কিছু বাচলে তুই খাবি।”
শিয়াল জানতো, সিংহ একবার খাওয়া শুরু করলে আজ আর সব না খেয়ে ছাড়বে না। কারণ, গত ২ দিন ধরে সিংহের পেটে কোনো মাংস ঢুকে নি। শিয়াল তবুও তাতে রাজি হলো। কারণ, তার মাথায় অন্য পরিকল্পনা ছিল।

শিয়াল জঙ্গলের কচি কচি ঘাসের দিকে রওনা হলো। পথে এক হরিণীকে দেখল তার ২টা বাচ্চার সাথে। শিয়াল কৌশলে একটা বাচ্চা সিংহের ডেরায় লুকিয়ে রাখল। হরিণী তার বাচ্চাকে না পেয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল।

শিয়াল তখন তাকে বলল, “তোমার বাচ্চা সিংহের ডেরায়। সিংহ তাকে দুপুরে খাবে। এখন সে গোসল করতে গিয়েছে। এই সুযোগে তুমি তোমার ছানাটিকে নিয়ে আসতে পারো। তবে তোমাকে যাতে সিংহ আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য তোমার পায়ে কালো রং করে নাও। এতে সিংহ খুব ভয় পাবে। কারণ, সিংহ কালো রংকে ভুত বলে মনে করে।”

হরিণী তার কথামতো তাই করলো। আর শিয়ালের সাথে সিংহের ডেরায় গিয়ে দেখে তার ছানাটিকে। যেহেতু সিংহ সেখানে ছিল না, তাই সে ডেরায় প্রবেশ করলো। যেই হরিণী প্রবেশ করলো, অমনিই ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সিংহ হরিণীর উপর হামলা করলো। তারপর তার ছানাটিকে ছেড়ে দিলো। কারণ, সিংহ কোনো ছোট, বাচ্চা প্রাণীকে শিকার করে না।

এরপর সিংহ মৃত হরিণীটিকে খেতে যাবে এমন সময় সিংহ লক্ষ করলো, হরিণীর পায়ে কালো রং। এর কারণ সে শিয়ালের কাছে জানতে চাইলে। শিয়াল তখন এই হরিণীর পা কে অশুভ বলে আখ্যায়িত করলো। আর বলল, “এগুলো আপনি খেলে আপনার অনেক ক্ষতি হবে। তার চেয়ে এগুলো আমাকে দেন। আমি দূরে কোথাও ফেলে আসি।”
সিংহ অমঙ্গলের কথা ভেবে হরিণীর রানসহ সমস্ত পা শিয়ালকে ফেলার জন্য দিয়ে দিলো।

আর চালাক শিয়াল দূরে গিয়ে আরাম করে খেতে লাগলো।

Related Posts

13 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.