আমি আগন্তুক (প্রকৃতির গল্প)

অঝোরে ঝরে যাচ্ছে সবুজ সমারোহ থেকে অক্লান্ত শিশির। মাঘের অতিথি কুয়াশায় পূর্ণ নীল গগন। হয়তো সূর্য তার উৎকৃষ্ট গুন দেখাতে না পেরে হাহাকার করছে ।কয়েক মুহূর্ত পর পর বরফ শীতল বাতাস এসে শরীরে কাপুনি দিচ্ছে।

এই সম্ভাব্য পরিবেশে এক আগন্তুক ঘাসের জলে তার চরণ ভিজিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। গায়ে তার ঘন কালো চাদর। কিছু সময় পর বারংবার সে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে সাদা ধোয়ায়। সাদা আর সবুজের মিশ্রণে এক মায়াবী পূর্ণ পরিবেশ গড়ে উঠেছে এখানে। যে মায়ায় বাঁধা পড়বে সকল জীবন, যে মায়া কখনো কাটবার মতো নয়, যে মায়ায় মায়াবী হয়ে উঠতে বাধ্য যা সব তুচ্ছ। সেই আগন্তুক ক্লান্তিহীনভাবে অবিরত হাঁটছে। এ রূপের সমাপ্তি ঘটেছে কোথায় জানতে আগ্রহী সে। কিন্তু এই অপরূপ রূপ যে স্বর্গীয় যার শুরু ও শেষ অপ্রকাশ্য এবং অজানা।

কিছুটা দূরে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান জানা-অজানা সবকিছু যে সাদা গ্রাস করছে, হারিয়ে যাচ্ছে সাদার সাগরে। হঠাৎ এরকম! শব্দ শুনতে না পারলে বুঝা বড় দায় হত এখানে যে নদীর শুরু ঘটেছে। বারির নদী না বলে কুয়াশার নদী বলা বড় উত্তম হবে ।নদীর পাড় বেয়ে হেঁটে চলেছে উৎসুক আগন্তুক ।এই বিচিত্র দৃশ্যে ধরণির সকল অর্থ অর্থহীন হয়ে পড়বে, নিরর্থক হয়ে পড়বে সকল বাস্তববাদী কর্ম।

ঐ অদূরে সবুজ ক্ষেতের সন্ধান পাওয়া গেল।নদী ঘেঁষে বসে আছে। বসন্তসখার কন্ঠ কানে প্রবেশ করছে।দীর্ঘ গাছগুলো অস্থির হয়ে পড়েছে চঞ্চল হাওয়ায়।আগন্তুক মাঝ পথ দিয়ে হেঁটে ঘাসের ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে। তার বহু আকাঙ্ক্ষা সে নিষ্প্রাণ হয়ে যাবে কিন্তু এ পথের যেন সমাপ্ত না ঘটে।

যেখানে সকল জটিলতা সরল হয়ে ওঠে, যেখানে সকল কল্পনা সত্যতে রূপান্তরিত হয়, যেখানে সকল অনুমান স্থিতি পায় ।সেখানে কে চাইবে না চিরকাল থাকতে,কে চাইবে না সেখানে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে , কে চাইবে না হারিয়ে যেতে ।প্রকৃতির সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে এখানেই। তবে এখন অরুণ কুয়াশাকে ফাঁকি দিয়ে মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে তার অস্তিত্বের উপস্থিতি বোঝাতে ।দ্যুতিময় রোদ আর একটু পর পর নিভে যাওয়ার খেলায় জড়িয়েছে। সরু সরণি দিয়ে সেই অজানা ব্যক্তিটি নিরন্তর হেঁটে চলেছে যার একপাশে অনুগ্রহ গাঙ আর অন্যপাশে রোদে জ্বলজ্বল করা মঞ্জুরি পূর্ণ মাঠ। এই মৃত্তিকার পথ আঁকা বাঁকা হয়ে কেবল অগ্রসর হয়ে চলেছে ।এখানকার খানিক বিরতির পর যে পবন বেয়ে আসছে তাতে নয়নের জল বের হওয়ার মতো।

ঘন কালো চাদর ভালো ভাবে জড়িয়ে নিলেন। অবশ্য কিছুটা পথ পরপর দু-একটি কুটির দেখা যাচ্ছে ।তা হতে ধোঁয়া গগনে উড়ে যাচ্ছে। এক স্ত্রীলোক কলসি ভরে গাঙের পানি নিয়ে যাচ্ছে। খানিকটা দূরে মাটি কাটছে এক লোক। যার প্রতিটি কোপে মাটির সাথে ধোঁয়া উপরে আসছে। গাঙের পাড়ে বসে এক শিশু পানি কতটা ঠান্ডা ভাবছে হয়ত ।সে স্পর্শ করবে নাকি করবে না তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে।

আগন্তুক তো অনেক দূরে চলে গেল। বাতাসে তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে আসছে । হাঁপিয়ে ওঠা সূর্যটি এখন চারপাশে বিস্ফোরিত হচ্ছে। এ পথের শেষে হলুদ শাড়ি পরা কেউ দাঁড়িয়ে আছে ।আগন্তুক তার কৃষ্ণ চাদরটি খুলে হাতে নিয়ে খুবই ধীর গতিতে তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

Related Posts

7 Comments

Leave a Reply

⚠️

Ad Blocker Detected

Our website uses advanced technology to provide you with free content. Please disable your Ad Blocker or whitelist our site to continue.